শহরতলিতে অটোর অনুমতিতে দেরি, ক্ষোভ

গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে শহর লাগোয়া এলাকাগুলিতে অটো চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল প্রশাসন। আবেদনপত্র নেওয়ার কাজও হয়ে সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে বছর খানেক হল। কিন্তু কবে তা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সকলেই অন্ধকারে। অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই এই কাজে গতি আসেনি। অথচ, এই কাজে দু’দিক দিয়ে লাভ।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২১
Share:

গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে শহর লাগোয়া এলাকাগুলিতে অটো চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল প্রশাসন। আবেদনপত্র নেওয়ার কাজও হয়ে সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে বছর খানেক হল। কিন্তু কবে তা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সকলেই অন্ধকারে। অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই এই কাজে গতি আসেনি। অথচ, এই কাজে দু’দিক দিয়ে লাভ। এক দিকে গ্রামীণ এলাকার পরিবহণে গতি আসবে, অন্য দিকে বেকার যুবকেরা আয়ের পথ খুঁজে পাবেন। তা-ও এই কাজে দেরি কেন? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আরটিএ বোর্ডের সদস্য প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “পুজোর মরসুমে কিছুটা সময় চলে গিয়েছে। তবে কালীপুজো-ভাইফোঁটা পেরিয়ে গেলেই আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে অটো চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে।”

Advertisement

শহরের মধ্যে গতি বাড়াতে তোড়জোর শুরু হয়েছিল কয়েকবছর আগে। প্রথমে খড়্গপুর শহরে, তারপর মেদিনীপুরে অটো চলাচল শুরু হয়। তখন আবেদনপত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন রুটে অটো চালানোর অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। খড়্গপুর অটো অনেক বেশি। আর মেদিনীপুরে রিকশা চালকদের প্রবল বাধা কাটিয়ে অটো চালানো শুরু হয়। এখন অবশ্য শহরের বেশিরভাগ এলাকাতেই অটো চলে।

কিন্তু শহরতলির কী হবে?

Advertisement

শহর লাগোয়া বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকার মানুষ শহরের উপরেই নির্ভরশীল। তা সে বাজার হোক বা অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজ-ব্যাঙ্কে যাতায়াত, শহরে আসতেই হয়। যাতায়াতের জন্য ভরসা সেই সাইকেল বা মোটর সাইকেল। কিছু এলাকায় ট্রেকার চলে। আর কিছু এলাকায় রয়েছে বাস। কিন্তু সে সব সংখ্যায় এতই কম যে বাসিন্দাদের সমস্যায় পড়তে হয়। শহরতলির যাতায়াতের এই সমস্যার কথা ভেবেই ২০১৩ সালে শহর লাগোয়া এলাকাগুলিতেও অটো চালানোর জন্য পদক্ষেপ শুরু হয়। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় সহজে কেউ অটো চালাবেন কেন? তাতে ততটা লাভ নাও হতে পারে। সকলেই চাইবেন শহরের মধ্যে অটো চালাতে। শহরে বেশি অটো চালানোর অনুমতি দিলে, সেই সব অটো শহরের মধ্যে ঘুরে বেড়ালে উল্টো ফল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন অটোর জন্য হবে যানজট। গতির পরিবর্তে তা গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে।

তাই প্রশাসন পরিকল্পনা করে শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও যেতে হবে অটোগুলিকে। যে আবেদনকারী একটি রুটের যত বেশি পরিমাণ অংশ গ্রামীণ এলাকায় চালানোর জন্য আবেদন করবেন তাঁকে তত দ্রুত অনুমতি দেওয়া হবে। অর্থাৎ কেউ ১০ কিলোমিটার রাস্তায় অটো চালানোর আবেদন জানিয়েছেন। তিনি যদি ৭ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা ও ৩ কিলোমিটার শহরের রাস্তায় চলার জন্য আবেদন করেন তাহলে ভাল। প্রশাসন জানিয়েছে, অবশ্যই ৭০-৬০ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় অটো চালানোর জন্য জোর দিচ্ছে। আর কেউ যদি গ্রামীন এলাকার পুরোটাই চান তাহলে তো খুবই ভাল। শুধু গ্রাম থেকে শহরে ঢুকবেন আবার যাত্রী নিয়ে গ্রামে ফিরবেন। অর্থাৎ কেউ শিরোমণি থেকে মেদিনীপুর শহরের ধর্মা বা কেরানিতলা, নয়াগ্রাম থেকে বাসস্ট্যান্ড। এ ভাবেই জেলা জুড়ে এ বার অটো চালানোর অনুমতি দিতে চাইছে প্রশাসন। শুধু মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটাল বা ঝাড়গ্রামের মতো বড় শহরই নয়, বেলদা, দাঁতন, চন্দ্রকোনা রোড, চন্দ্রকোনা টাউন, প্রভৃতি এলাকাতেও। ২০১৩ সালে আবেদনপত্রও চাওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই আবেদনপত্র জমা নেওয়াও হয়ে গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় ১২০০ জন অটো চালানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কতজন অটো চালানোর উপযুক্ত তা খতিয়ে দেখতে অনুমতি দেওয়ার কথা, কিন্তু সেই কাজটাই এখনও হয়নি। কী ভাবে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হবে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা যত বেশি পরিমাণ গ্রামীণ এলাকায় অটো চালানোর আবেদন চাইবেন তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়াও দেখা যেতে পারে, একই রুটে একাধিক ব্যক্তি অটো চালানোর অনুমতি চেয়েছেন, কিন্তু পাশের অন্য রাস্তাতেও অটো চালানো জরুরি, কিন্তু সেখানে কেউ অটো চালানোর জন্য আবেদন জমা দেননি। সে ক্ষেত্রে সেখানেও কয়েকজনকে চালানোর কথা বলা হবে। ভাইফোঁটার পরই আবেদনকারীদের ডেকে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তারপরই অনুমতি দেওয়া হবে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ১২০০ জনের মধ্যে যদি এক হাজার জনকেও অনুমতি দেওয়া যায় তাহলে জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সেই সঙ্গে বেকার যুবকরাও উপার্জনের একটি নতুন পথ খুঁজে পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন