বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জেতায় বিজয়োৎসবে মাতলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাও। মেদিনীপুর শহরে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
বিক্ষিপ্ত ভাবে স্কুলভোটে প্রার্থী দেওয়া শুরু হয়েছিল আগেই। এ বার স্কুল পরিচালন সমিতি, সমবায় সমিতির সব নির্বাচনে লড়াই করার জন্য ব্লকস্তরে নির্দেশ পাঠাল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপি। নেতৃত্বের নির্দেশ, কোন এলাকায় কবে কোন সমিতির নির্বাচন রয়েছে, বিজ্ঞপ্তি বেরোনোর পরই তা জেলায় জানাতে হবে। ওই সব নির্বাচনে লড়তেও হবে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের মানুষ বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে দেখছেন। এ বার আমরা জেলার স্কুল পরিচালন সমিতি, সমবায় সমিতির মতো নির্বাচনেও প্রার্থী দেব। ইতিমধ্যে আমরা চন্দ্রকোনা রোড, খড়্গপুর গ্রামীণের মতো এলাকায় স্কুল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি। অনেকে আমাদের প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন।”
মঙ্গলবারই রাজ্য বিধানসভায় খাতা খুলেছে বিজেপি। বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন দলের প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। এই প্রথম একক ভাবে লড়াই করে রাজ্য বিধানসভায় জিতল বিজেপি। এই ফলাফলে উচ্ছ্বসিত দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বও। মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর-খড়্গপুরে দলের কর্মী-সমর্থকেরা বিজয়োৎসবে মাতেন। চলে আবির খেলা, মিষ্টি বিলি। পরিবর্তীত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জেলাতেও একেবারে ব্লকস্তর পর্যন্ত সংগঠন চাঙ্গা করতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই জন্যই স্কুল পরিচালন সমিতি, সমবায় সমিতির মতো স্থানীয় নির্বাচনে লড়াই করার নির্দেশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ক’বছর আগেও বিজেপির তেমন সংগঠন ছিল না। কার্যত বিনা সংগঠনেই গত লোকসভায় ১০ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে লোকসভার ফলের নিরিখে জেলার ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে যেখানে একটিতেও এগিয়ে নেই বামেরা, সেখানে খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি। এই সাফল্যের পরে জেলা বিজেপির প্রধান লক্ষ্য, এই জনসমর্থনকে সাংগঠনিক খাঁচার মধ্যে নিয়ে আসা। কারণ জেলা নেতৃত্বের একাংশের মতে, মোদী- হাওয়ায় ভর করে সমর্থন পাওয়া যতটা সহজ হয়েছে, সাংগঠনিক দিক থেকে এই সমর্থন ধরে রাখা তার থেকে অনেক বেশি কঠিন। সংগঠন না বাড়লে তৃণমূলের মতো দলকে টক্কর দেওয়া কঠিন।
আগামী পাঁচ-ছ’মাসে জেলায় চারশোরও বেশি সমবায় সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা। বেশ কয়েকটি স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনও হবে। সে সব ভোটে লড়লে আখেরে সংগঠন বাড়বে বলেই মনে করছেন নেতৃত্ব। সংগঠন বাড়াতে অন্য প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক হচ্ছে পরিস্থিতি দেখে কিছু ক্ষেত্রে সংগঠন নাড়াচাড়ার কাজও চালানো হচ্ছে। দলীয় সূত্রে খবর, যেখানে যেমন পরিকাঠামো প্রয়োজন, সেখানে তেমন পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। প্রয়োজনে জেলা থেকে সব রকম সাহায্য করা হবে। তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিতে বুথ-ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলায় জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর জেলার ৬টি পুরসভায় ভোট খড়ার, রামজীবনপুর, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, ঘাটাল এবং খড়্গপুরে। পুরভোটে সাফল্য পেতে এখন থেকেই ঘর গোছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবু বলেন, “গত লোকসভার সমর্থন ধরে রাখতে হবে। এ জন্য দলের সব স্তরে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”