জিন্দলদের কারখানার সামনে জমিদাতাদের মিছিল। সোমবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
ইস্পাত প্রকল্পের জন্য কেনা জমি ফেরত দিতে আগ্রহী জিন্দল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শালবনির দাবি, শুধু জিন্দলদের কেনা জমি কেন, সরকার যে জমি নিয়েছিল ফেরত দিতে হবে তা-ও।
শালবনিতে এই প্রকল্পের জন্য মোট ৪৩৩৪ একর জমি নিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। এর মধ্যে ৩০৩৫ একর জমি ছিল খাস। ৭৯৯.৯৭ একর প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের। ১৮৯.৬২ একর জমি পাট্টা মালিকদের থেকে ক্ষতিলপূরণের বিনিময়ে ফিরিয়ে নিয়েছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। আর বাকি ২৯৪ একর রায়তি জমি জিন্দলেরা সরাসরি মালিকের থেকে কিনেছিলেন। এই ২৯৪ একর জমিই ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন জিন্দল কর্তৃপক্ষ। জমিদাতাদের অবশ্য দাবি ফেরাতে হলে সব জমিই ফেরাতে হবে। বিশেষ করে যে সব পাট্টা প্রাপক সরকারকে জমি দিয়েছিলেন, তাঁরাও জমি ফেরতের দাবি তুলছেন।
প্রায় পাঁচশো পাট্টা প্রাপক কারখানার জন্য সরকারকে জমি দিয়েছিলেন। তাঁদেরই এক জন দিলীপ চালক বলেন, “আমরা তো কারখানা হবে বলেই সরকারকে জমি দিয়েছিলাম। টাকাও পেয়েছিলাম। এখন যদি কারখানা হবে না বলে জিন্দলরা জমি ফেরায় তাহলে আমাদের জমি ফেরত দেওয়া হবে না কেন? আমরা তো ওই জমিতে চাষবাস করতাম।” জমিদাতাদের সংগঠন ‘শালবনি জেএসডব্লিউ বেঙ্গল স্টিল লিমিটেড ল্যান্ড লুজার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতোও বলেন, “জমি ফেরত দিলে সকলকেই দিতে হবে।” পরিষ্কার আরও জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তাঁদের সঙ্গে জমি ফেরত নিয়ে সরাসরি কেউ কথা বলছে, ততক্ষণ কারখানা চালুর দাবিতেই তাঁদের আন্দোলন চলবে।
আর শেষমেশ জমি ফেরত নিতে হলে?
পরিষ্কারের জবাব, “কোন শর্তে জমি ফেরত দেওয়া হবে তা দেখতে হবে। জমির দামের ৫০ শতাংশ শেয়ার ছিল। যা বর্তমানে দ্বিগুণ হওয়ার কথা। তা ছাড়া, চাষযোগ্য অবস্থায় জমি নেওয়া হলেও তা আর সেই অবস্থায় নেই। যার যতটা জমি ছিল তা প্রত্যেকের নামে পুনরায় রেজিস্ট্রি করা, রেজিস্ট্রির খরচ দেওয়া, জমিকে চাষ যোগ্য করা, ক্ষতিপূরণ দেওয়া-সহ বিভিন্ন বিষয় দেখে সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
জমি ফেরতের এই সব জটিলতা ছাপিয়ে কিন্তু ধরা পড়ছে শালবনির হতাশা। প্রায় ৮ বছর ধরে যে আশার আলো বুকে নিয়ে ঘুরছিলেন, তার অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল ৩০ নভেম্বর, যেদিন জিন্দল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দল কারখানার কাজ স্থগিত রাখার ঘোষনায়। আর সোমবার জমি ফেরতের ঘোষনায় কফিনের শেষ পেরেকটা পোঁতা হয়ে গেল। এমনটাই মনে করছেন জমিদাতারা। ফলে কারখানার শেয়ার, চাকরি, পরোক্ষ ভাবে নানা ধরনের ব্যবসা - কারখানা না হলে এসব থেকেও তো বঞ্চিত হবেন এলাকার মানুষ। কারখানার সূচনা পর্বে যে জিন্দল ও তৎকালীন রাজ্য সরকার ঘোষনা করেছিলেন, এই কারখানা এশিয়ার বৃহত্তম কারখানা হবে। যে কারনে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে গুরুত্ব না দিয়ে জিন্দলদের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন জমিদাতা পরিবারের জগন্নাথ মাহাতো। তাঁর কথায়, “চাকরির হাতছানি কি ছাড়া যায়! কিন্তু এখন কিছুই ভাবতে পারছি না।” জিন্দলদের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন জমিদাতা পরিবারের আদিত্য মাহাতো। তাঁর কথায়, “উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর দু’জায়গায় দু’ বছর করে চার বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। যাতে চাকরিটা কোনও ভাবেই না ফসকে যায়। এখন মনের অবস্থা কী হতে পারে বুঝতেই পারছেন।”
জমিদাতাদের নেতা পরিষ্কারও বলছেন, “কারখানা হলেই খুশি হতাম। কারণ, বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান, এলাকার সার্বিক উন্নয়নsssss এ সব নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। এ ভাবে সব চুরমার হয়ে যাবে ভাবিনি!” এলাকার তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতিরও বক্তব্য, “কারখানা হলেই ভাল হত। এলাকার মানুষের অনেক আশা ও স্বপ্ন ছিল।”