১৫ই আসছেন রাহুল, বিজেপিতে যোগদানের প্রস্তুতি শুরু জেলায়

বামেদের জমিতে ফাটল ধরিয়েই পশ্চিম মেদিনীপুরে সংগঠন বাড়াতে চলেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, আগামী ১৫ জুন জেলায় আসছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ওই দিন বিভিন্ন দল ছেড়ে কয়েকশো নেতা-কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দেবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০১:০২
Share:

বামেদের জমিতে ফাটল ধরিয়েই পশ্চিম মেদিনীপুরে সংগঠন বাড়াতে চলেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, আগামী ১৫ জুন জেলায় আসছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ওই দিন বিভিন্ন দল ছেড়ে কয়েকশো নেতা-কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দেবেন। আগামী ১৫ জুন রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে বিভিন্ন দল ছেড়ে যে বেশ কয়েকশো নেতা-কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দেবেন, তা মানছেন বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “মানুষ তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে দেখতে শুরু করেছেন। অনেকেই দলে আসতে চেয়ে যোগাযোগ করেছেন। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”

Advertisement

দলবদলের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কয়েকটি নাম নিয়ে ইতিমধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে। জল্পনায় রয়েছে সুকুমার ভুঁইয়া, অশোক সেনাপতির মতো একদা বাম নেতাদের নাম। সুকুমারবাবু ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসির জেলা কমিটির সদস্য অশোকবাবুর সঙ্গেও এখন আর বাম নেতৃত্বের ‘মধুর’ সম্পর্ক নেই। তিনি যে দলবদল করতে চলেছেন, রবিবার তা মেনে নিয়েছেন এই শ্রমিক নেতা। তাঁর কথায়, “এটা ঠিক, আমি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছি।” কেন এই দলবদল? অশোকবাবুর মতে, “পার্টির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। বাম নেতৃত্বের মধ্যেও ভয়ভীতি চলে এসেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সে ভাবে প্রতিবাদ-আন্দোলনই হচ্ছে না।” সুকুমারবাবু অবশ্য বলেন, “আমি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি।”

রবিবারই কলকাতায় শেষ হয়েছে বিজেপির রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। বৈঠকে যোগ দিতে তুষারবাবু গিয়েছিলেন। এ দিন সন্ধ্যায় খড়্গপুরে ফেরেন। চলতি সপ্তাহে দলের কর্মীদের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক বৈঠক করবেন। আপাতত, বিজেপির জেলা নেতৃত্বের ‘পাখির চোখ’ ১৫ জুনের কর্মসূচিকে সফল করা। প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, ওই দিন রাহুল সিংহ ছাড়াও সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় উপস্থিত থাকতে পারেন।

Advertisement

লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরপরই রাজ্যের অনান্য জেলার পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরেও বিজেপিতে নাম লেখানোর প্রবণতা শুরু হয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দল ছেড়ে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। তালিকায় নাম রয়েছে অর্ধেন্দু পাত্র, সালমা বিবিদের। অর্ধেন্দুবাবু তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সালমা পিংলার জামনা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্যা ছিলেন। বিভিন্ন দলের যে সব নেতা- কর্মী- সমর্থকেরা বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে, তাঁদের সিংহভাগই বামেদের সঙ্গে ছিলেন বা রয়েছেন। যেমন সুকুমারবাবু ৩৭ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। অশোকবাবু ২৪ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। শ্রমিক নেতা হিসেবে খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলের একাংশে তাঁর প্রভাবও আছে।

বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরের সর্বত্র বিজেপির তেমন সংগঠন নেই। কার্যত বিনা সংগঠনেই এ বারের লোকসভায় যে হারে বিজেপির ভোট বেড়েছে, তাকে মোটেও লঘু করতে দেখতে চাইছেন না অনেকেই। জেলার তিন আসনের মধ্যে মেদিনীপুরে বিজেপি ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ঘাটাল এবং ঝাড়গ্রামে যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তাত্‌পর্যপূর্ণ হল, লোকসভার ফলকে বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি ধরলে জেলার ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে যেখানে একটিতেও এগিয়ে নেই বামেরা, সেখানে খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এ জেলায় এই ভোটপ্রাপ্তির পিছনে যে মোদী- হাওয়া কাজ করেছে, তা মানছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। এখন তাঁদের লক্ষ্য, এই জনসমর্থনকে সাংগঠনিক খাঁচার মধ্যে নিয়ে আসা। কারণ একাংশ নেতৃত্বের মতে, মোদী- হাওয়ায় ভর করে সমর্থন পাওয়া যতটা ‘সহজ’ হয়েছে, সাংগঠনিক দিক থেকে এই সমর্থন ধরে রাখা তার থেকে অনেক বেশি ‘কঠিন’ হবে। আর সংগঠন না- বাড়লে তৃণমূলের মতো দলের সঙ্গে টক্কর দেওয়া অসম্ভব। ইতিমধ্যে বিজেপি নেতৃত্ব বিভিন্ন এলাকায় সংগঠন বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। মেদিনীপুর শহরে যেমন বুথ ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আপাতত, যে সব ওয়ার্ডে দলের কমিটি নেই, সেখানে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে একজনকে আহ্বায়ক করে কাজ চালানো হচ্ছে। আগামী বছর খড়্গপুর পুরসভা নির্বাচন রয়েছে। পুরসভার দখল পেতে রেলশহরের ওয়ার্ডগুলোর ক্ষেত্রেও কিছু রণকৌশল নিয়েছেন নেতৃত্ব। পাশাপাশি, ব্লকস্তরে সংগঠন গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে। এখন সব ব্লকে সমান পরিকাঠামো নেই। অনেক ব্লকে দলের অফিসও নেই। দলীয় সূত্রে খবর, যেখানে যেমন পরিকাঠামো প্রয়োজন, সেখানে তেমন পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। প্রয়োজনে জেলা থেকে সব রকম সাহায্য করা হবে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো জোগানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন