Migrant workers

মজুরি বেশি, আবার পাড়ি দক্ষ কারিগরদের

লকডাউনে কাজ হারিয়ে এসেছিলেন নিজের রাজ্যে। সেই দক্ষ শ্রমিকদের অবস্থা এখন কেমনলকডাউনে কাজ হারিয়ে এসেছিলেন নিজের রাজ্যে। সেই দক্ষ শ্রমিকদের অবস্থা এখন কেমন

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:২০
Share:

বিমান ধরার অপেক্ষায় পরিযায়ী শ্রমিকরা।—ছবি পিটিআই।

লকডাউন-পর্বে হুগলির খানাকুলে কলিম্বা গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন তেলঙ্গানায় সোনার কারিগর কিঙ্কর মাইতি। সপ্তাহখানেক হল কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছেন। কী করবেন? তাঁর কথায়, “আমি করতে পারি, এমন কোনও কাজই এখানে নেই।”

Advertisement

দিল্লি, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে আতঙ্কিত হয়ে দলে-দলে বাংলায় নিজের শহরে-গাঁয়ে ফিরে এসেছিলেন বহু দক্ষ শ্রমিক। এঁদের কেউ স্বর্ণকার, কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ জরিশিল্পী। রাজ্য সরকার ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়ার চেষ্টা করেছে ঠিকই। কিন্তু তাতে সাধারণত যে মাটি কাটা বা গাছ লাগানো ধরনের কাজ হয়, তা করতে অনেকে অভ্যস্ত নন, অনেকে আবার চেয়েও যথেষ্ট কাজ পাননি বলে অভিযোগ। ফলে আনলক পর্ব শুরু হতেই কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টাও শুরু হয়েছে। যদিও অগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এ রকম কত দক্ষ শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন তার কোনও হিসেব নবান্ন বা অধিকাংশ জেলা প্রশাসনের কাছে নেই।

পূর্ব বর্ধমানে নাদনঘাটের বাসিন্দা, গয়না শিল্পী সিরাজুল শেখ ইতিমধ্যে দিল্লি ফিরে গিয়েছেন। সেখান থেকেই ফোনে তিনি বলেন, ‘‘মাস তিনেক নিজের বাড়িতে ছিলাম। কিন্তু ওখানে কোনও কাজ নেই। তাই ফিরে এসেছি।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরে ফেরা প্রায় ৫৪ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ২৮ হাজারই স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। দাসপুরের স্বর্ণশিল্পী বিকাশ হাইত বলেন, ‘‘এখানে থাকলে খাব কী? বেঙ্গালুরু থেকে ডাক এলেই ফিরে যাব।’’ নদিয়ার বাসিন্দা, অখিল ভারত স্বর্ণকার সঙ্ঘের রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “শিল্পীরা প্রায় সকলেই ফিরে যেতে প্রস্তুত। হয়তো নানা কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।”

Advertisement

একই অবস্থা গুজরাত, দিল্লি ও রাজস্থান থেকে ফিরে আসা জরিশিল্পী বা পাথর পালিশের মিস্ত্রিদেরও। কেতুগ্রামের আসরাফ মুন্সি, আজাদ মুন্সিরা গুজরাতে জরিশিল্পীর কাজ করতেন। তাঁদের কথায়, ‘‘তিন মাস আগে বাড়ি ফেরা ইস্তক ১০০ দিনের প্রকল্পে মাত্র ১২ দিন কাজ পেয়েছি। জমানো টাকা শেষ। গুজরাতে ফিরতে চাই।’’ দিনমজুরির কাজ জুটলেও মজুরিতে পোষাচ্ছে না। দাদপুরের বালিকুখারি গ্রামের জসিমুদ্দিন হালদার কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে দৈনিক ৯০০ টাকা মজুরি, এখানে দিনমজুরি ১৭০ টাকা রোজ। এতে চলবে?’’

হায়দরাবাদ থেকে কাজ ছেড়ে বাঁকুড়ার সিমলাপালে পুখুরিয়া গ্রামে ফিরেছেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বিপত্তারণ দাস, রাজমিস্ত্রি অনন্ত রায়েরা। তাঁরাও বলছেন, ‘‘কাজ নেই, তাই ফেরা ছাড়া রাস্তা নেই।’’

সকলের না হলেও অনেকেরই কর্মস্থল থেকে ডাক আসতে শুরু করেছে। প্রয়োজনে দল বেঁধে গাড়ি ভাড়া করে ফিরে যেতে বলছেন মালিকেরা। কয়েক দিন আগেই মুর্শিদাবাদের নওদার গ্রাম থেকে ১৩০ জন শ্রমিককে নিয়ে রওনা দিয়েছে বাস। লকডাউন পর্বে উত্তরবঙ্গে ফিরে আসা দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা লক্ষাধিক। শুধু উত্তর দিনাজপুর জেলার নয়টি ব্লকেই বহু মানুষ রয়েছেন যাঁরা দিল্লি, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানে প্লাইউড, টাইলস, পাথর কারখানা বা হোটেলে কাজ করেন। শ্রমিক সরবরাহকারীরা বাসের ভাড়া মিটিয়ে দিতে রাজি হওয়ায় এঁদের একটা অংশও ভিন্ রাজ্যে কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছেন। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেকেই এখনও যেতে পারেননি।

ফেরার সুযোগ কবে আসে, কাজহারা দক্ষ শ্রমিকেরা আপাতত তারই অপেক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন