মাতৃভাষায় কথা বললে তো এখন হেয় করা হয়

২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের সকালে নিজের অনুষ্ঠানে শিখার কথা, তাঁর কাজের কথা বলেছেন মীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:২৪
Share:

মীর।আরজে ও অভিনেতা

ভাবতেই পারেননি শিখা। যাঁর কাজ তাঁকে অনুপ্রাণিত করত, সেই মীর নিজের অনুষ্ঠানে তাঁকে ফোন করবেন।

Advertisement

২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের সকালে নিজের অনুষ্ঠানে শিখার কথা, তাঁর কাজের কথা বলেছেন মীর। ঝাড়গ্রামে শিখাকে ফোন করে কথাও বলেছেন স্টুডিও থেকে। সেই কথোপকথন সম্প্রচারিতও হয়েছে রেডিওয়।

মীরের মতে, শিখা যে কাজ করে চলেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে অনেককে হেয় করা হয়। মীরের মতে, নিজের ভাষায় কথা বললে তা নিয়ে অন্য লোক মজা করছে, এটা অত্যন্ত আপত্তিজনক। এরকম হেয় করাটা সহ্য করা যায় না। তা বন্ধ করতে অনুষ্ঠান থেকে বার্তাও দিয়েছেন তিনি। মীরের কথায়, ‘‘সবার অধিকার আছে মাতৃভাষায় গর্ব করে কথা বলার।’’

Advertisement

শিখার সাঁওতালি ভাষায় অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে মীর স্মৃতিচারণে মশগুল হয়ে পড়েছিলেন। রেডিওয় সাঁওতালিতে অনুষ্ঠান শোনার কথা মনে করেন তিনি। মীর জানিয়েছেন, ছোটবেলায় রেডিওয় নাটক শোনার নেশা ছিল তাঁর। তখনও এফএম চ্যানেল আসতে অনেক দেরি। আকাশবাণীতে সেই সময়ে বাংলা নাটক হতো। সেই সঙ্গে সম্প্রচারিত হতো সাঁওতালি নাটকও। তিনি সব ধরনের নাটকই শুনতেন। ভাষা বুঝতেন না। কিন্তু কোথায় যেন একটা শিকড়ের গন্ধ মিশে থাকত সেই নাটকে। মীরের কথায়, ‘‘ভাষা বুঝতাম না। কিন্তু নাটকের মধ্যে মধ্যে যে গানের সুর, মিউজিক, সেটা অদ্ভুত ভাল লাগত। সুরের মধ্যে যে অদ্ভুত মাটির টান রয়েছে, সেটা বোঝা যেত।’’

এই মাটির ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন খুব দরকার বলে মনে করেন মীর। তিনি বলেন, ‘‘এখন সব জায়গাতেই জাতীয় ভাষা কী তা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এমনকী, গানের ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক ভাষার গান যেন দ্বিতীয় সারিতে। তাই প্রাদেশিক ভাষায় যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’

এই গুরুত্ব ভারতে সব সময় দেওয়া না হলেও বিদেশে কিন্তু তা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মীর। তিনি বললেন, ‘‘ইউরোপে ঘোরার সময় দেখেছি সেখানে কোনও দেশের মানুষ সেই দেশের ভাষাতেই কথা বলেন। মাতৃভাষায় কথা বলতে তাঁরা অসম্ভব গর্ব অনুভব করেন। কিন্তু ভারতে তা হয় না। এখানে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে, ইংরেজি-হিন্দি না জানলে হেয় করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’

দেশে এমন সমস্যা অবশ্য দীর্ঘদিনের। খবরের কাগজে মাঝে মাঝেই এই ধরনের খবর প্রকাশিত হয়। ভাষাগত সমস্যায় উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো থেকে পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের দিল্লি-সহ বেশ কিছু রাজ্যে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। বারবার এই অভিযোগ উঠেছে।

এমন নানা সমস্যায় অনেকে প্রকাশ্যে মাতৃভাষা বলতে কুণ্ঠিত হন বলে শিখা নিজেও বুঝেছেন। তাই নিজের অনুষ্ঠানে তিনি সকলকে বলেন সাঁওতালি জানলে সাঁওতালিতেই কথা বলতে।

পড়াশোনা বা কাজের জন্য অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে কথা মেনেও মীর মনে করেন, মাতৃভাষার চর্চা করা অবশ্যই উচিত। মাতৃভাষার এই গুরুত্ব বুঝে দীর্ঘদিন ধরেই আঞ্চলিক এবং প্রাদেশিক ভাষায় বিজ্ঞাপন করে বহুজাতিক অনেক সংস্থাই। হলিউডি ছবিও ডাবিং করা হয় তামিল, তেলুগুর মতো প্রাদেশিক ভাষায়। ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন ওয়েবসাইটও নানা আঞ্চলিক ভাষায় ‘কনটেন্ট’ পৌঁছে দিচ্ছে ইদানীং। তাই আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব কমেছে, এই ধারণা ঠিক নয়।

মীর তাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘কেউ ইংরাজি না জানলে তাঁর জীবন বৃথা এই ধারণা একেবারেই ভুল।’’ মীরের বক্তব্য পরিষ্কার, কেউ যদি মাতৃভাষা গর্ব করে বলেন তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন