এর আগে সচিন তেন্ডুলকরের কাছে আবেদন করে হাতেনাতে ফল পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি স্কুল। এই সব খবর পড়েই আশায় বুক বেঁধেছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। এ বার শহরের উন্নয়নের জন্য প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারের কাছে সাংসদ তহবিল থেকে টাকা চেয়ে আবেদন করলেন তিনি।
শুক্রবার অশোকবাবু জানিয়েছেন, গত ১৬ অগস্ট তিনি সচিনকে চিঠি লেখেন। সেখানে অনুরোধ করেন একটি সেতু তৈরিতে সাহায্য করার জন্য। আবেদনে তিনি জানিয়েছেন, সেতুটি হয়ে গেলে পাঁচটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত সহজ হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর (সচিনের) কাছে লিখিত ভাবে প্রকল্পের খতিয়ান দিয়ে অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ করা হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, সচিনের কাছে তদ্বিরের জন্য তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও অনুরোধ করেছেন। বলেন, ‘‘আমিও কিছু দিনের মধ্যে সচিনের সঙ্গে কথা বলব।’’ যদিও সৌরভ জানিয়েছেন, এখনও এমন কোনও অনুরোধ তিনি পাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে আমি এখনও কিছু জানি না।’’
পথটা দেখিয়েছিলেন উত্তমকুমার মহান্তি। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের গোবিন্দপুর মকরামপুর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক। দোরে দোরে ঘুরে যখন স্কুল ভবনের জন্য টাকা জোগাড় করতে পারেননি, তখন তিনি সচিনের কাছে আবেদন করেছিলেন। ফলও মিলেছিল। ৭৬ লক্ষ ২১ হাজার টাকা পেয়েছিল স্কুলটি। তার পরে গোপীবল্লভপুরের আশুই পল্লিমঙ্গল বিদ্যাপীঠও আদিবাসী পড়ুয়াদের হস্টেল তৈরির জন্য টাকা পেয়েছিল। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘এ সব খবর পড়েই আমরা ওঁর কাছে আবেদন পাঠিয়েছি। আমরা চাই, সচিন শিলিগুড়িকেও সাহায্য করুন।’’ অশোকবাবু খতিয়ান দিয়ে দেখান, তাঁদের রাজ্যসভার সাংসদরাও শহরের জন্য সময়ে সময়ে আর্থিক সাহায্য করেছেন। শিলিগুড়ির বস্তি উন্নয়নে সাংসদ তপন সেন ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন ৫০ লক্ষ টাকা। মহিষমারি নদীতে সেতুর জন্য দলের সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি দু’দফায় দিয়েছেন মোট ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। টাকা দিয়েছেন কংগ্রেসের সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যও।
অশোক জানান, শিলিগুড়ির ১ নম্বর ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে পঞ্চনই নদীর উপরে একটি সেতু তৈরি করা দরকার। নদীর দু’পারে মোট পাঁচটি স্কুল রয়েছে, যার অধিকাংশ পড়ুয়া তফসিলি জাতি ও উপজাতির। এখন তাদের ৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। সেতুটি তৈরি হলে তাদের যাতায়াত অনেক সহজ হবে। অশোকের মতে, এই প্রকল্পের মোট খরচ এক কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। সচিনের সাংসদ তহবিল থেকে এক কোটি টাকা সাহায্য চাওয়া হয়েছে। বাকি টাকার ব্যবস্থা পুরসভা করতে পারবে বলে তাঁর দাবি।
শহরের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে মেয়র বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গেও কথা বলেছেন। তা হলে তৃণমূল সাংসদদের কাছে কেন আর্থিক সাহায্য চাইছেন না তিনি? অশোকের কথায়, ‘‘ওঁদের কাছে কিছু চাইব না।’’ এ কথা শুনে রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘আমাদের সরকার তো নিয়মিত টাকা দেয় শিলিগুড়ি পুরসভাকে। বাম আমলে ওঁরা (অশোকবাবুরা) পেতেন মাসে ১৪ লক্ষ টাকা করে। আমরা সেটা বাড়িয়ে ৫০ লক্ষ করেছি। এ ছাড়াও জল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার পরে যদি উনি বৈষম্য করতে চান, আসতে না চান, আমাদের কিছু বলার নেই।’’
শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় অশোকবাবুর এই সচিনের শরণ নেওয়াকে ‘রাজনৈতিক চমক’ বলেই কটাক্ষ করছেন। অশোক কিন্তু সে সব কানে তুলছেন না। তিনি আশাবাদী, সচিন তাঁর ডাকে ঠিকই সাড়া দেবেন।