BJP MLA Asim Sarkar

বিজেপির অন্দরে ‘অসীম’ ক্ষোভ! বেসুরো হরিণঘাটার গায়ক বিধায়ক, ‘ভাঙা কুলো’ বললেন নিজেকে

নিজের ক্ষোভের কথা ফেসবুক পোস্টের মধ্যে সীমিত না রেখে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও জানিয়েছেন অসীম। তবে রাজ্য বিজেপির মত, তাঁর কিছু বলার থাকলে দলের মধ্যেই বলুন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১০
Share:

হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে যে তাঁর মতামত গুরুত্ব পায়নি, আগেই তা ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করে জানিয়েছিলেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। এ বার সরাসরি নিজেকে ভাঙা কুলোর সঙ্গে তুলনা করে দলের অস্বস্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন এই কবিয়াল। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘আমার ঠাকুর মা বলতেন, ভাঙা কুলাও কাজে লাগে, ওটা ফেলে দিও না দাদুভাই। এখন দেখছি তার উল্টো।’’

Advertisement

তাঁর এমন পোস্ট প্রসঙ্গে বিধায়ক অসীমকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘‘আপনারই বুঝে নিন এই ফেসবুক পোস্টের অর্থ।’’ এই পোস্ট কি কোনও ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ জন বিধায়কের মতামতকে উপেক্ষা করা হল। তার অর্থ তো এই দাঁড়ায় যে তারা ভাঙা কুলোর থেকেও অপ্রয়োজনীয় বস্তু। আগামী দিন তো আসছে, তখনই বোঝা যাবে কারা প্রয়োজনীয় আর কারা অপ্রয়োজনীয়।’’ উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বনগাঁ জেলায় মণ্ডল স্তরের সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করে দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট করলেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক। যা নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে চরম অস্বস্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কারণ নিজের ফেসবুক পোস্টে অসীম লিখেছিলেন, ‘‘মাননীয় সুব্রত ঠাকুর মহাশয় আমাকে বললেন মন্ত্রী মহাশয় (মাননীয় শান্তনু ঠাকুর) বাড়িতে এলে ২৭ তারিখে আমাদের পাঁচ জন বিধায়ককে নিয়ে একসঙ্গে ঠাকুরবাড়িতে বসে বৈঠকের পর সর্বসম্মতিক্রমে মণ্ডল সভাপতি নির্ধারণ করা হবে। সবাইকে আমি সেই কথাই বলে বলে দিয়েছিলাম। ও মা, হঠাৎ করে কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই, মণ্ডল সভাপতিদের লিস্ট বেরিয়ে গেল? ব্যাপারটা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন দেখছি চারিদিক থেকে প্রকৃত লড়াকু বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’’ মণ্ডল সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে তাঁর সঙ্গে বনগাঁ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের কথাও নিজের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘দেবদাসদা আমাকে কথা দিয়ে বলেছিলেন, জেলা কমিটি এবং মণ্ডল কমিটি অবশ্যই লোকাল বিধায়কদের পূর্ণ মতামত নিয়েই করবেন। সেই দেবদাসদা এই ভাবে কথা নষ্ট করবেন আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারছি না। তবে আমি সবার হাতে-পায়ে ধরে বলছি ঠাকুর মহাশয়কে (বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর) জয়লাভ করাবার জন্য আমাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়া ভাল।’’

Advertisement

এর পরেও নিজের ফেসবুকে বেশ কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেছিলেন হরিণঘাটার বিধায়ক। যা লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপির জন্য ভাল খবর নয়। কারণ, গত কয়েকটি নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট গিয়েছে বিজেপির পক্ষে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের সময়তেও মতুয়া অধ্যুষিত আসনগুলিতে পদ্মফুল ফুটেছিল। বনগাঁ লোকসভার অধীন সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ছয়টিতেই জিতেছিল বিজেপি। বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস দলবদল করে তৃণমূল চলে গেলেও, পাঁচ জন বিধায়ক রয়ে গিয়েছেন বিজেপিতেই। আর তাদের মতামত উপেক্ষা করে বিজেপি কী ভাবে বনগাঁ লোকসভায় নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে সক্ষম হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন কবিয়াল। নিজের ক্ষোভের কথা ফেসবুক পোস্টের মধ্যে সীমিত না রেখে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও জানিয়েছেন। তবে তাঁর ক্ষোভ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মত, কিছু বলার থাকলে দলের মধ্যেই বলুন অসীম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন