শ্রমিক মেলায় বিক্ষোভ আইএনটিটিইউসি কর্মীদের।
একই দিনে সরকারি অনুষ্ঠানে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ‘দাপট’ এবং দলের মঞ্চে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের সাক্ষী থাকল দক্ষিণ দিনাজপুর। রবিবার দুপুরে বালুরঘাটের শ্রম মেলায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের মঞ্চে না ডাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্মী-সমর্থকরা। সরকারি কর্মীরা মঞ্চ থেকে নেমে ‘ভুল হয়েছে’ বলে তাঁদের শান্ত করে, নেতাদের মঞ্চে ডেকে নেন। সন্ধ্যায় গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ি হাইস্কুলে তৃণমূলে অঞ্চল কমিটির সভায় মঞ্চে বিধায়ক মাহুমেদা বেগম নিজের ক্ষোভ জানাতেই, তাঁর হাত থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই দুই ঘটনাতেই কিছুটা হলেই অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা তৃণমূল নেতারা। সরকারি মঞ্চে কেন তৃণমূল নেতাদের ডাকা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অবশ্য বলেছেন, ‘‘গঙ্গারামপুরে এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আর শ্রম মেলার খবর জানি না।’’
গোষ্ঠী কোন্দল মেটাতে কিছু দিন আগে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে করেন। যদিও, তার কোনও প্রভাব যে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পড়েনি, তা গঙ্গারামপুরের ঘটনা থেকেই প্রমাণ, দাবি নেতাদের একাংশের।
এ দিন বিকেলে ফুলবাড়ি হাইস্কুল মাঠে তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সভা চলছিল। সেই সভায় হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা, সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকার-সহ অন্যরা। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক মাহুমেদা বেগমের অভিযোগ, তাঁকে ওই সভায় ডাকা হয়নি। নিজের বিধানসভা এলাকায় সভা হচ্ছে জেনে তিনি গিয়েছিলেন বলে দাবি। সভা মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠে সভার আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ জানাতেই তাঁর মাইক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। বিধায়কের অভিযোগ, ‘‘আমি সভার কথা জানতাম না। তাই জানতে চেয়েছিলাম।’’ যদিও, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকারের দাবি, ‘‘আমন্ত্রণ করা হয়েছিল বলেই বিধায়ক সভায় আসেন। অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’’
এ দিন-ই দুপুরে, বালুরঘাট কলেজে শ্রম মেলার উদ্বোধন হওয়ার পরেই অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূলের শ্রমিক নেতারা। মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং দুই দিনাজপুর জেলার শ্রমিক মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বালুরঘাটে। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক মেলার উদ্বোধন করবেন বলে জানানো হলেও, তিনি না আসায় মেলার উদ্বোধন করেছেন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী। উদ্বোধনের কিছু পরেই মঞ্চের সামনে থাকা তিন জেলার তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেতারা বিক্ষোভ শুরু করে। এ দিনের সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে মন্ত্রী বা সরকারি আধিকারিকরা ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা হয়নি। যদিও, আইএনটিটিইউসি নেতা-কর্মীরা দাবি করতে থাকেন, সংগঠনের চার জেলার সভাপতিদেরও মঞ্চে ডাকতে হবে। মঞ্চে তখন মন্ত্রী ছাড়াও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। শ্রম দফতরের আধিকারিকরা মঞ্চ থেকে নেমে নেতা-কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কয়েকজন আধিকারিক ‘ভুল হয়েছে’ বলে দাবি করে কর্মী-সমর্থকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বিক্ষোভ থেমেও যায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আগে চার জেলার আইএনটিটিইউসি নেতাদের মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলার শ্রম দফতরের আধিকারিকরা অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও, আইএনটিটিইউসির নেতা আব্দুল তোয়াব এর দাবি, ‘‘যাঁদের জন্য মেলা, যাঁদেরকে নিয়ে এই অনুষ্ঠান, তাদেরই প্রথমে মঞ্চে কেন ডাকা হয়নি। আমাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছি।’’
এ দিকে, শাসক দলের নেতাদের সরকারি মঞ্চে ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী সংগঠনের সদস্যরা। সিটু নেতা শিশির দে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা কোনও নিয়ম নীতি মানেন না। তাই তাদের অনুগামীরাও যে সরকারি মঞ্চ দখল করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া সরকারি খরচে তো সর্বত্র দলেরই প্রচার চলছে।’’ কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন মদন শীলের অভিযোগ, ‘‘যে অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। সেখানে কে মঞ্চে থাকবে তা নিয়েই রেষারেষি চলল।’’ যদিও, এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, ‘‘অন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এ দিন উপস্থিত ছিলেন না। থাকলে তাঁদেরও নিশ্চই মঞ্চে ডাকা হতো।’’