সমুদ্রবন্দর নিয়ে মমতাকে পাল্টা চাপ মোদী সরকারের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজনৈতিক ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটছেন, তখন পাল্টা আক্রমণাত্মক মনোভাব নেওয়ার কৌশল নিচ্ছে মোদী সরকারও। তাজপুরে নতুন বন্দর তৈরির ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে রাজ্যের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়ে সে কথাই বুঝিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজনৈতিক ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটছেন, তখন পাল্টা আক্রমণাত্মক মনোভাব নেওয়ার কৌশল নিচ্ছে মোদী সরকারও। তাজপুরে নতুন বন্দর তৈরির ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে রাজ্যের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়ে সে কথাই বুঝিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।

Advertisement

তাঁর যুক্তি, তাজপুরে রাজ্য সরকার বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বন্দর তৈরি করতে চাইলে কেন্দ্র সাগর বন্দর তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে। সাগর ও তাজপুর, দু’টি বন্দরই তৈরি করতে হলে

দু’টিরই নিয়ন্ত্রণ জাহাজ মন্ত্রকের অধীন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে তা জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। এ বার রাজ্যের জবাবের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাতেও আপত্তি নেই বলে নিতিন জানিয়েছেন।

Advertisement

কলকাতা ও হলদিয়ার পাশাপাশি সাগরে একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা বাম জমানা থেকেই চলছে। সম্প্রতি মমতার সরকার সেটিকে বাতিল করে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে একটি বন্দর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজ্য সরকার নিজে ওই বন্দর তৈরি করবে না, এটি নির্মাণ করবে কোনও বেসরকারি সংস্থা।

তারাই থাকবে বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রস্তাব ছিল, প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ২৬ শতাংশ অংশীদারি নিক কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্যের এই প্রস্তাব খারিজ করে দিচ্ছে জাহাজ মন্ত্রক। মন্ত্রকের যুক্তি, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বেসরকারি সংস্থার লেজুড়বৃত্তি করবেন না।

তাজপুরে বন্দর গড়ে তোলার পিছনে রাজ্যের যুক্তি ছিল, সাগরে বন্দর নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানা। আজ জাহাজমন্ত্রী গডকড়ী বলেন, ‘‘সাগর বন্দর নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনও সমস্যা নেই। আমাদের কাজ এগোচ্ছে। ওখানে একটি রেল ও সড়ক সেতু তৈরি করতে হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের চুক্তিও হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের ২৬ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে।’’ তবে মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিন মাস আগে তিনি জানতে পারেন যে রাজ্য অন্য একটি জায়গায় অন্য একটি বন্দর তৈরি করতে চায়। গডকড়ী বলেন, ‘‘ খুব কাছাকাছি দু’টি বন্দর গড়ে তুললে তা লাভজনক হবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা সাগরে বন্দর তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে আসব। এ বার রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই হবে। রাজ্যকেই ঠিক করতে হবে, একটি না কি দু’টি বন্দর চাই। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র, রাজ্যের কার কত অংশীদারি থাকবে।’’ তিনি জানান, কেন্দ্র এ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় রাজি।’’

জাহাজ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার প্রথমে তাজপুরে বন্দর গড়ে তোলার মধ্যে কেন্দ্রকে জড়াতেই চায়নি। নিজেরাই আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডেকে কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সাগরের এত কাছাকাছি বেসরকারি বন্দর তৈরি হলে কোনও বন্দরই লাভজনক হবে না। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র সাগর বন্দর থেকে সরে আসবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তার পর রাজ্য জানায়, কেন্দ্র চাইলে তাজপুরে ২৬ শতাংশ অংশীদারি নিতে পারে। কিন্তু জাহাজ মন্ত্রকের কর্তারা তাতে রাজি নন। সাগরের সিংহভাগ অংশীদারি কেন্দ্রের কাছে। তাজপুরেরও সিংহভাগ অংশীদারি চায় কেন্দ্র।

রাজ্যের পাল্টা যুক্তি, গুজরাতের মতো অনেক রাজ্যেই এক ডজনের বেশি ছোট-বড় বন্দর পাশাপাশি কাজ করে। তা হলে পশ্চিমবঙ্গে কেন কেন্দ্র আপত্তি তুলবে! রাজ্য সরকার ১৫০ কোটি খরচ করে সেই বন্দরে যাতায়াতের সড়ক এবং রেলপথ তৈরি করে দেবে। ওই প্রকল্পের জন্য এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ করতে হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন