ঘূর্ণিঘোর কাটিয়ে বর্ষা এল কেরলে, পথ চেয়ে বাংলা

সূচনাতেই এক দফা দেরি করে ফেলেছিল সে। তবে সেই প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় নির্ঘণ্ট মেনেই মৌসুমি বায়ু ঢুকে পড়ল মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে। কয়েক দিন ধরেই কেরলে ভাল বৃষ্টি হচ্ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০৩:০৭
Share:

সূচনাতেই এক দফা দেরি করে ফেলেছিল সে। তবে সেই প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় নির্ঘণ্ট মেনেই মৌসুমি বায়ু ঢুকে পড়ল মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে।

Advertisement

কয়েক দিন ধরেই কেরলে ভাল বৃষ্টি হচ্ছিল। আবহবিদেরা বলছিলেন, বর্ষা যে কেরলের দিকে দ্রুত এগোচ্ছে, এটা তারই ইঙ্গিত। দিল্লির মৌসম ভবন বুধবার জানাল, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কেরল দিয়ে এ দিন সকালেই মূল ভূখণ্ডে ঢুকেছে।

স্বাভাবিক নিয়ম-নির্ঘণ্ট মানলে কেরল হয়ে বর্ষার চলে আসার কথা ১ জুন। কিন্তু সেই স্বাভাবিকতায় এ বার বাদ সাধে একটি ঘূর্ণিঝড়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রোয়ানু নামে বঙ্গোপসাগরের সেই ঘূর্ণিঝড় আরবসাগরের বায়ুপ্রবাহের গতিকে প্রভাবিত করায় বর্ষার গতিপ্রকৃতি প্রথম থেকেই অন্য খাতে বইছে। মৌসম ভবন তখনই জানিয়েছিল, কেরল দিয়ে মূল ভূখণ্ডে বর্ষা ঢুকতে দেরি হবে অন্তত এক সপ্তাহ। সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের দিন সাতেক পরে হাজির হল মৌসুমি বায়ু।

Advertisement

কেরল থেকে স্বাভাবিক নিয়মে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা পৌঁছতে সময় নেয় সাত দিন। অর্থাৎ প্রাথমিক বিলম্বের কথা ছেড়ে দিলেও চলতি মাসের ১৫ তারিখ নাগাদ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার চলে আসার কথা। তবে আবহাওয়া এ বার যে-রকম লাগাতার অনিয়ম ও খামখেয়ালিপনা করে চলেছে, তাতে মৌসুমি বায়ু সেই বিলম্বিত সময়সীমাও মানবে কি না, এই মুহূর্তে সেটা বলতে পারছেন না আবহবিদেরা। ‘‘আগামী সাত দিন বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি কেমন থাকে, তার উপরেই সব নির্ভর করছে,’’ বললেন এক আবহবিদ।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু-ই যত নষ্টের গোড়া, বলছে হাওয়া অফিস। মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে মৌসুমি বায়ু পৌঁছনোর পথ দু’টি। প্রধান পথটি কেরল-পথ। অন্যটি আন্দামান-মায়ানমারের ঘুরপথ। রোয়ানু এ বার ওই দু’টি রাস্তাতেই কাঁটা ছড়ানোয় দু’দিক থেকেই দেরি হয়ে গিয়েছে বর্ষার। মূল পথে কেরলে বর্ষার পৌঁছতে দেরি হয়েছে অন্তত সাত দিন। রোয়ানু-র কুপ্রভাব এড়াতে পারেনি আন্দামান-মায়ানমার পথও। ওই পথ দিয়ে বর্ষা মায়ানমার-উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে পৌঁছে যায় উত্তরবঙ্গে। ওই রাস্তায় নির্দিষ্ট দিনেই অর্থাৎ ১৫ মে বর্ষা ঢুকে পড়েছিল আন্দামানে। বঙ্গোপসাগর-মায়ানমার হয়ে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৌঁছনোর কথা ছিল ১ জুন। কিন্তু রোয়ানু সেই পথেও বর্ষার গতিতে আঘাত হেনেছে। তাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও এখনও পৌঁছয়নি বর্ষা। আশা করা হচ্ছে, সেই পথে দু’-এক দিনের মধ্যেই বর্ষা হাজির হবে।

এ বছর বসন্তের সূচনা থেকেই দাপট দেখাচ্ছে গ্রীষ্ম। কলকাতাকেও পুড়িয়েছে তাপপ্রবাহ। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এখনও তাপপ্রবাহ চলছে। সেখানে বর্ষণ-ঘাটতি এই মুহূর্তে ৯১ শতাংশ। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতেও ৭৯ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। আর সারা দেশে গড় ঘাটতির হার ৩৫ শতাংশ। তাই বর্ষা ঢুকতে আর কত দেরি করবে, তা নিয়ে মহা-উদ্বেগে ছিল কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক। মৌসুমি বায়ু এ দিন কেরল দিয়ে মূল ভূখণ্ডে পৌঁছে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা কিছুটা কাটল বলে মনে করছেন কৃষিকর্তারা। কেরল থেকে সেই মৌসুমি বায়ু কবে এবং কী ভাবে উপরের দিকে উঠে আসে, তার উপরেই নির্ভর করছে গাঙ্গেয় বঙ্গ-সহ গোটা দেশের বর্ষা-ভাগ্য।

মৌসুমি বায়ুর আগমনে দেরি হলেও এ বার সারা দেশে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হবে বলে সাম্প্রতিকতম পূর্বাভাসে জানিয়েছে মৌসম ভবন। কিন্তু সেই সুসমাচারও সংশয়মুক্ত নয়। পুরো মরসুম জুড়ে কতটা সুষম ভাবে বর্ষণ হচ্ছে, তার উপরেই নির্ভর করে সারা দেশের কৃষি-ভাগ্য আর সামগ্রিক আবহাওয়া। বৃষ্টি এ বার কতটা সামঞ্জস্য বজায় রেখে ঝরবে, সেই দিকে তাকিয়ে আছে কৃষিজগৎ। ছবি: পিটিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন