নিরাপত্তা বাড়ানো হল আরও ১৭ নেতা-মন্ত্রীর 

প্রাথমিক খোঁজখবরের পর ১৭ জন নেতা-মন্ত্রীর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০৩:২৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের ঘটনায় ঘুম ছুটেছে শাসক দলের। গত মাসে ওই ঘটনার পরে শাসক দলের আর কোন কোন নেতার উপর হামলা হতে পারে, তা খোঁজ করতে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর উপর নির্দেশ এসেছিল নবান্নের শীর্ষ মহল থেকে। প্রাথমিক খোঁজখবরের পর ১৭ জন নেতা-মন্ত্রীর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

Advertisement

ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে গঠিত সিকিয়োরিটি ডিরেক্টরেট সূত্রে বলা হয়েছে, হামলা হতে পারে, এমন নির্দিষ্ট খবর পাওয়ার পরেই ১৭ জনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ এই নেতারা যেখানেই যাবেন পুলিশি নিরাপত্তা, এসকর্ট ইত্যাদি দেওয়া হবে। এ ছাড়া, আগে থেকেই যে সব নেতা-মন্ত্রী নিরাপত্তা পেতেন, তাঁদের জন্য আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা বহাল থাকছে। রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা বিনীত গোয়েল অবশ্য বলেন, ‘‘ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও আলোচনা করব না। এটা নিতান্তই গোপন পদক্ষেপ।’’

এখন রাজ্যে জেড-প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়র থাকাকালীন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও একই নিরাপত্তা পেতেন। এখন আর তা দেওয়া হয় না। জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস। তাঁদের নিরাপত্তা যেমন ছিল তেমনই আছে। আগে-পিছে পাইলট-এসকর্ট গাড়ির সঙ্গে সর্বক্ষণের অন্তত চার জন নিরাপত্তা রক্ষী এঁদের সঙ্গে থাকে।

Advertisement

কিন্তু সত্যজিৎ বিশ্বাস খুন হয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূল নেতাদের নিরাপত্তা ঢেলে সাজা হচ্ছে। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘শাসক দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জের যেখানে সর্বাধিক, সেখানেই নিরাপত্তা বাড়াতে হয়েছে।’’ গোয়েন্দা সূত্রের খবর, নদিয়ায় কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীমকুমার সাহা, তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত, রানাঘাট-পশ্চিমের বিধায়ক শঙ্কর সিংহের নিরাপত্তা বেড়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে ক্যানিং-পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা, দক্ষিণ কলকাতা যুব তৃণমূল সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, উত্তর কলকাতা যুব তৃণমূল সভাপতি জীবন সাহা, মুর্শিদাবাদের যুব তৃণমূল সভাপতি আমিরুল ইসলাম, বর্ধমানের যুব তৃণমূল সভাপতি সুভাষ মণ্ডল, নানুরের বিধায়ক তথা বীরভূমের যুব সভাপতি গদাধর হাজরারও। দলীয় মহলে এঁরা সকলেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। যদিও পুলিশ জানায়, সুরক্ষা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একমাত্র ‘জীবনের ঝুঁকি’র দিকটিই বিচার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: আজ নিঃশর্ত মুক্তি অভিনন্দনের, শান্তির বার্তা দিয়ে ঘোষণা করলেন ইমরান

আরও পডু়ন: সাহসী মায়ের জন্যই ডাকাবুকো অভিনন্দন

এ ছাড়াও অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তা স্তর জেড থেকে বাড়িয়ে ‘জেড উইথ লিড সিকিয়োরিটি মোবাইল’ স্তরে উন্নীত করা হয়েছে। যার অর্থ, অনুব্রত যেখানেই যাবেন, তার আগে পুলিশের গাড়ি ‘পরিস্থিতি’ যাচাই করতে করতে যাবে। জেড ক্যাটেগরি পেয়েছেন আরও তিন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নিরাপত্তা পাবেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল সভাপতি মোহন শর্মা, সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া মৌসম নুর এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। জীবনের ঝুঁকির কথা ভেবে এক সাংবাদিককেও সর্বক্ষণের নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা ডিরেক্টরেটের কর্তারা।

কেন্দ্রীয় ভাবে তৈরি এই তালিকার বাইরেও প্রতি জেলার পুলিশ সুপারদের স্থানীয় নেতাদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই সব জেলাতেই দেহরক্ষী পেয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের কয়েকশো নেতা। এক নিরাপত্তা কর্তার কথায়, ‘‘সামনেই লোকসভা ভোট। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান ও মেদিনীপুরের একাংশে শাসক দলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণেই নেতাদের নিরাপত্তা না-বাড়িয়ে উপায় নেই।’’ দেহরক্ষী না-নিয়ে নেতাদের এলাকায় যেতে বারণ করেছে পুলিশ। যে কোনও রাজনৈতিক সভায় যাওয়ার আগে শাসক দলের নেতাদের স্থানীয় থানাকে খবর দিয়ে যেতে বলা হয়েছে বলে জানান নবান্নের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন