টাকার লাইনে ভিড়, তবু বাক্স ভোট বোঝাই

ভোটের থেকে নোটের লাইন দীর্ঘ। তবুও ভোটদানের হার পৌঁছে গেল ৮০ শতাংশে। কোচবিহার ও তমলুক লোকসভা এবং মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে শনিবার উপনির্বাচনের এই দু’টি ছবি পাশাপাশি রেখে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং ভোট লুঠের অভিযোগ তুলল বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২২
Share:

মেমারির জাবুই গ্রামে ভোটারদের চপ মুড়ি বিলি করছেন তৃণমূল কর্মীরা। ছবি: উদিত সিংহ।

ভোটের থেকে নোটের লাইন দীর্ঘ। তবুও ভোটদানের হার পৌঁছে গেল ৮০ শতাংশে। কোচবিহার ও তমলুক লোকসভা এবং মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে শনিবার উপনির্বাচনের এই দু’টি ছবি পাশাপাশি রেখে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং ভোট লুঠের অভিযোগ তুলল বিরোধীরা।

Advertisement

ওই তিন কেন্দ্রেরই সিংহভাগ এলাকায় এ দিন উপনির্বাচনে দেখা গিয়েছে, ভোটের বুথ প্রায় মাছি তাড়াচ্ছে, আর ব্যাঙ্কের সামনে নোটের জন্য লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমনিতেই উপনির্বাচনে ভোটদানের হার কম হয়। তার উপর এ বার রয়েছে নোটের দাপট! ফলে অনেকেই ভেবেছিলেন, ভোটদানের হার আরও কমতে পারে। যেমন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালেঞ্জ ছিল— তমলুকে ভাই দিব্যেন্দুর জয়ের ব্যবধান নিয়ে যাবেন ২ লাখে। কিন্তু ভোটদানের হার কম হলে কি ওই লক্ষ্য পূরণ হবে? এই প্রশ্ন সংশয়ে রেখেছিল শুভেন্দুকেও। কিন্তু এ দিন ভোট গ্রহণ শেষে জেলা প্রশাসন জানায়, কোচবিহার, তমলুক এবং মন্তেশ্বরে ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৭৭, ৮০ এবং ৮৬ শতাংশ। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে কোচবিহার এবং তমলুকে ভোট পড়েছিল ৮২.৫৮ এবং ৮৭.৬ শতাংশ। আর মন্তেশ্বরে গত বিধানসভা ভোটে ভোটদানের হার ছিল ৮৫ শতাংশের কাছাকাছি।

বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের যথেচ্ছ সন্ত্রাস এবং ভোট লুঠের ফলেই এই নির্বাচনে ভোটদানের হার এত বেশি হয়েছে। তাই কোচবিহারের ৮১২, তমলুকের ৬০০ এবং মন্তেশ্বরের ২০০-র বেশি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। আবার ছাপ্পা ভোটের বহর দেখে মন্তেশ্বরের কংগ্রেস প্রার্থী বুলবুল আহমেদ তো বেলা গড়ানোর আগেই ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছেন।

Advertisement

এ দিনের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রহরা ছিল না। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই সুযোগটাই পুরোপুরি নিয়েছে শাসক দল। এমনিতে বুথের তুলনায় ব্যাঙ্কের এটিমে ভিড় ছিল বেশি। বুথ ফাঁকা পেয়ে দেদার ছাপ্পা মেরেছে শাসক দলের কর্মীরা। তা ছাড়া মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রাখতে তিন জায়গাতেই দাপিয়ে বেড়িয়েছে তৃণমূলের বাইক বাহিনি।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন,‘‘কোচবিহারের মাথাভাঙায় ভোটারদের বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি, সিপিএম প্রার্থীর উপরও হামলা চালানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের হাতে কালি দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোট দিয়েছেন তৃণমূলের কর্মীরা।’’ একই ভাবে হলদিয়ার বাম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের অভিযোগ,‘‘কুঁকড়াহাটির একটি বুথে তাঁদের পোলিং এজেন্ট আরাবিল্লা খানের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, ময়না এলাকায় বেশ কিছু বুথ দখল করে ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূল। পুলিশ-প্রশাসন দেখেও দেখেনি।’’

যদিও ভোটের পর মুকুল রায় দাবি করেন,‘‘মানুষের আস্থা হারিয়ে প্রলাপ বকছেন বিরোধীরা। কারণ সর্বত্রই শান্তিপূর্ণ হয়েছে ভোট গ্রহণ। বাংলার মানুষ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছেন তা বিধানসভা ভোটেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ বারও সেটাই ফের প্রমাণ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন