ঝিলে পাখীদের জলকেলি। — নিজস্ব চিত্র।
শীত পড়লেই ওরা আসে। রাজ্যের নানা প্রান্তে বিদেশি পাখির ভিড় শীত বিলাসের অন্যতম অঙ্গ। কিন্তু তেমন করে ঘাটালের কোথাও পাখি আসত না এতদিন। গত দু’বছর সামান্য দু’এক ঝাঁক পাখি এসেছিল শহর সংলগ্ন মনোহরপুর ২ পঞ্চায়েতের হরিসিংহপুর পার্কের ঝিলে। এ বছর সবাইকে অবাক করে প্রায় হাজার দু’য়েক পাখি এসেছে।
এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। মেদিনীপুর শহর থেকেও অনেকে এসে দেখে গিয়েছেন। কিন্তু সে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হল না। একে তো এ বছর শীতের জমক তেমন জমল না। ডিসেম্বরের শেষে কিছুটা শীত পড়লেও, নতুন বছর পড়তে না পড়তেই উধাও উত্তরে হাওয়া। ফলে এক এক করে ঘাটাল ছাড়ছে পাখির ঝাঁক।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন শুধু শীত কমে যাওয়াই এর একমাত্র কারণ নয়। অশোক সরকার, নির্মল ঘোষরা গত কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করছেন পাখিগুলিকে। তাঁদের বক্তব্য, ঠিকঠাক নজরদারির অভাবেই আগেভাগেই পাখি গুলি চলে যাচ্ছে। কেমন সেই অবহেলা? তাঁরাই জানাচ্ছেন, ঝিল সংলগ্ন এলাকায় একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজ তৈরি হচ্ছে। তার ফলে নষ্ট হচ্ছে ঝিলের পরিবেশ। অশোকবাবুদের ধারণা বাড়ি তৈরির জন্য ইট, বালি, সিমেন্টের ধুলো সম্ভবত পাখিগুলি সহ্য করতে পারছে না। এ ধারণা যে একেবারে ভ্রান্ত নয়, তার প্রমাণও মিলেছে। প্রথম দিকে পাখিগুলি ঝিলের যে অংশে আসছিল, সে দিকেই তৈরি হচ্ছে কলেজ ভবন। পরের দিকে পাখি গুলি চলে আসে ঝিলের অপর পাশে, একটি কাচা রাস্তার বিপরীতে।
এ দিকে এই নতুন আসা শীতের অতিথিদের দেখতে ভিড় জমছিল ঘাটালে। ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে শুরু করেছিলেন শহরবাসী। কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা পরের বছর আবার পাখি আসবে তো? মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “সামনের বছর হয়তো ওই কলেজও চালু হয়ে যাবে, তখন কি আর পাখি এসে থাকতে পারবে?’’
যদিও বন দফতরের দাবি, এই পাখির দেখা মেলে শীতেই। দফতরের ডিএফও (খড়্গপুর) অঞ্জন গুহ বলেন, “কলেজ তৈরির জন্য পাখিগুলি চলে যাচ্ছে— এ কথা ঠিক নয়। আর আসবে না এটা ভাবারও কোনও কারণ নেই।’’ তাঁর দাবি, দ্রুত গরম পড়ে যাওয়াতেই পাখি গুলি চলে যেতে শুরু করেছে। অঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, সামনের বছর কলেজ শুরু হলেই ছাত্রদের নিয়ে বৈঠক করবে তাঁরা। যাতে পাখিদের কোনও ভাবে কোনও সমস্যা না-হয়। এ বছরই কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পিকনিক করতে এসে কেউ যাতে ঝিলে প্লাস্টিক বা অন্য কোনও জিনিস না ফেলেন সে জন্য বারবার প্রচার চালানো হয়েছে। বিলি করা হয়েছে লিফলেটও।
ঘাটালের ঝিলে যে পাখিগুলির দেখা মিলেছে, সেটি সরাল প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। সারা বিশ্বে এরা ‘লেসার হুইসলিং টিল’ নামে পরিচিত। এই সরাল প্রজাতির পাখিগুলির আদত বাসস্থান আফগানিস্থান, পাকিস্থান এবং দক্ষিণ চীন। এক একটি ঝাঁকে ২০০-২৫০ টি পাখিই থাকে। জলজ উদ্ভিদ খেয়েই বেঁচে থাকে। দূষণমুক্ত পরিষ্কার জলেই থাকতে ভালোবাসে এরা।