ঝড়ের গতিতে শেষ ট্রেনের টিকিট

পুজোয় লক্ষ্মীলাভের আশা ডুয়ার্স জুড়েই

জৈষ্ঠ মাসে মাঝে মাঝে ঝড়বাদলা হচ্ছে ডুয়ার্সে। গাছ উপড়ে, বাড়ি ভেঙে, ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিও হচ্ছে বিস্তর। কিন্তু এই জৈষ্ঠেই আরেক ঝড়ে হাসি ফুটেছে ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে। তা হল, টিকিট কাটার ঝড়।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৭:০৭
Share:

জৈষ্ঠ মাসে মাঝে মাঝে ঝড়বাদলা হচ্ছে ডুয়ার্সে। গাছ উপড়ে, বাড়ি ভেঙে, ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিও হচ্ছে বিস্তর। কিন্তু এই জৈষ্ঠেই আরেক ঝড়ে হাসি ফুটেছে ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে। তা হল, টিকিট কাটার ঝড়। পুজোর চার মাস আগেই ঝড়ের গতিতে শেষ হয়ে গিয়েছে ডুয়ার্সগামী সমস্ত ট্রেনের টিকিট। পুজোর মরসুমে তাই লক্ষ্মীলাভের আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ী থেকে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ মানুষ, সকলেই।

Advertisement

এই ঝড় ঘনীভূত হতে অবশ্য সাহায্য করেছে ভারতীয় রেলের চারমাস আগের টিকিট বুকিং করার প্রথা। এর জেরেই জৈষ্ঠের চড়া রোদেও পুজোর গন্ধ পাচ্ছেন লাটাগুড়ি, মূর্তি, ধূপঝোরা , বাতাবাড়ি, সামসিং, সুনতালেখোলার হোটেল ও রিসর্ট মালিকেরা। ক্যালেন্ডারের তারিখ ধরে ধরে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত উত্তরবঙ্গগামী যাবতীয় ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলেছেন যাত্রীরা। গত সপ্তাহে শিয়ালদহ, হাওড়া এবং কলকাতা থেকে ছেড়ে উত্তরবঙ্গে আসা প্রতিটি ট্রেনের টিকিট পুজোর দিনগুলোর জন্যে মিলছিল। প্রতিটি দিনের টিকিট প্রতিদিন কিছু মিনিটের মধ্যেই ফুরিয়ে গিয়েছে। রেলের নির্ধারিত সময় সকাল ৮টায় টিকিট সারা দেশের যাত্রীদের জন্যে খোলার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। ঠিক যেন টি-টোয়েন্টির মেজাজে ঝোড়ো ব্যাটিং করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা! টিকিট শেষ হওয়ার পরে ওয়েটিং লিস্টে লম্বা লাইন দিয়েও টিকিট কেটে চলেছেন অনেকে। দার্জিলিং মেল থেকে তিস্তা-তোর্সা সর্বত্রই ঠাঁই নাই অবস্থা। ওয়েটিং লিস্ট ২০০ ছাড়াচ্ছে। এই অবস্থায় অসমগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের শুধুমাত্র বসে যাওয়ার আসনও সংরক্ষণ করেছেন অনেকে। পুজোতে রেলের টিকিটের কাড়াকাড়ি ফি বছর থাকলেও এ বারের টিকিটের হাহাকার নজিরবিহীন বলেই দাবি সব মহলের।

পর্যটকদের চাহিদা দেখে খুশি রেলকর্তারাও। রেলের আলিপুরদুয়ার রেল ডিভিশনের ডিআরএম সঞ্জীব কিশোর বললেন, ‘‘আমরা ট্রেনগুলোর টিকিট ছাড়ামাত্রই শেষ হবার বিষয়টি জেনেছি। যাত্রীরা আমাদের এলাকার ট্রেনগুলোকে যাত্রার জন্যে বেছে নিয়েছেন। এতে আমরা গর্বিত। পুজোতে বিশেষ ট্রেন কবে থেকে চালানো যায় তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে।’’ পুজোর দিনগুলোয় যেমন রেলের টিকিট ফুরিয়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে ফুরিয়ে গেছে ডুয়ার্সের রিসর্টের ঘরের বুকিংও। ষষ্ঠী থেকে দশমী ইতিমধ্যেই কোথাও আর তিলধারণের জায়গা দেওয়া যাবে না। বাতাবাড়ি-মূর্তি এলাকার রিসর্ট মালিকদের সংগঠন গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পুজোর দিনগুলোতে যাঁরাই রেলের টিকিট পেয়ে গিয়েছেন, তাঁরাই আর দেরি না করে রিসর্ট বুকিংয়ের জন্যে ফোন করছেন। সে কারণেই আমাদেরও পুজোর চারদিন আমাদের সংগঠনের রিসর্টের অধিকাংশ ঘরই ভরে গিয়েছে।’’

Advertisement

বেসরকরারি রিসর্ট মালিক পার্থ রায়ের উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং এবং লাটাগুড়িতে বিলাসবহুল হোটেল ও রিসর্ট রয়েছে। লাটাগুড়িতে পর্যটকেরা যাতে পুজোর সময় থেকে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে পারেন তার জন্যে পর্যটকদের জন্যে কী চমক দেওয়া যেতে পারে তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করে দেওয়া হয়েছে বলে পার্থবাবু জানান। মহালয়া থেকে কালীপুজো পর্যন্ত যে পুজোর মরসুম সেই দিনগুলোর বুকিং যে গতিতে এগিয়ে চলেছে তাতে এই জুন মাসের পর কোনও রিসর্টেই আর ঘর মিলবে না বলেই মনে হচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। ব্যবসা যে এ বছর ভাল হবেই সে বিষয়ে খুবই আশাবাদী ডুয়ার্সের লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেবও। প্রতিদিনই পর্যটকেরা রিসর্টের ঘর সম্বন্ধে জানতে চাইছেন বলে জানাচ্ছেন তিনিও। চারমাস আগেই পুজোর যে হাওয়া উঠে গেছে তাতে আখেরে পর্যটন ব্যবসায়ীদেরই সুবিধা হতে চলেছে বলে মত দিব্যেন্দুবাবুর।

তবে কেন এ বার এই লাগামছাড়া উদ্দীপনা, এর একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজেছেন উত্তর পূর্ব ভারতের ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন এতোয়ার কর্মকর্তা সম্রাট সান্যাল। সম্রাটবাবুর মতে, ‘‘২০১৪-তে এনসেফ্যালাইটিসের আতঙ্ক পুজোর আগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। পর্যটকেরা আতঙ্কে উত্তরবঙ্গের পাহাড়, জঙ্গলকে বাদ দিয়ে অন্যত্র গিয়েছিলেন। এরপর গত ২০১৫-তে লাগাতার ভূমিকম্প পর্যটকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছিল, যার প্রভাব পড়েছিল ব্যবসাতে। এ বারে বছরটা একপ্রকার নিরুদ্বেগ কেটেছে। গরমের সময়েও তাই খুব ভাল ব্যবসা হয়েছে। সে কারণেই এ বার পুজোতে পর্যটকদের বিপুল ঢল নামতে চলেছে ডুয়ার্সে।’’ তবে দ্রুতই যাতে ডুয়ার্স রুটে বিশেষ ট্রেনের ঘোষণা করা হয় সেই অনুরোধও রেলের কাছে করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন