মশা আটকানোর ‘জালে’ পড়ছে মাছ

ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। জামবনির রাস্তার ধারের জলা জমিতে মশারি দিয়ে মাছ ধরছিলেন ভুতু শবর, লুলক্যা শবররা। মশারি দিয়ে মাছ ধরা নতুন কিছু নয়। কিন্তু, অবাক হওয়ার বিষয় হল ওই মশারি তাঁরা পেয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতর থেকে! মশারি টাঙিয়ে ঘুমনোর অভ্যেস নেই। তাই মাছ ধরার কাজে লাগানো হয়েছে ওই মশারি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

বাহিরগ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৭
Share:

স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া মশারিতেই চলছে মাছধরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। জামবনির রাস্তার ধারের জলা জমিতে মশারি দিয়ে মাছ ধরছিলেন ভুতু শবর, লুলক্যা শবররা। মশারি দিয়ে মাছ ধরা নতুন কিছু নয়। কিন্তু, অবাক হওয়ার বিষয় হল ওই মশারি তাঁরা পেয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতর থেকে! মশারি টাঙিয়ে ঘুমনোর অভ্যেস নেই। তাই মাছ ধরার কাজে লাগানো হয়েছে ওই মশারি।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া মশারি টাঙিয়ে ঘুমোন না কেন? হেসে ভুতু শবরের উত্তর, ‘‘ওতে দম বন্ধ হয়ে আসে। ঘুম হয় না।’’

দিন কয়েক আগেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন জামবনির বাহিরগ্রামের বিজয়া বেরা (৪৮) নামে এক মহিলা। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি ডেঙ্গিতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপরও জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় মশা বাহিত রোগ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সচেতন নন বাসিন্দারা। ভোরে মশা কামড়ালে ডেঙ্গি হতে পারে, সেটা জানেন না বাহিরগ্রামের অধিকাংশ গ্রামবাসীই।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাহিরগ্রাম থেকে নিকটবর্তী সরকারি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৯ কিলোমিটার দূরে। আর গ্রাম থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের দূরত্ব ২০ কিমি। তাই কেউ অসুস্থ হলে প্রথমে দেখানো হয় গ্রামের হাতুড়েকে। গত ২২ জুলাই জ্বর হওয়ার পরে বিজয়াদেবীও তাই করেছিলেন। জ্বর না সারায় গত ২৬ জুলাই ঝাড়গ্রামের একটি নার্সিংহোমে বিজয়াদেবীকে ভর্তি করানো হয়। তারপর তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে রক্ত পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ২৯ জুলাই সকালে বিজয়াদেবীকে কলকাতায় রেফার করে দেন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় বিজয়াদেবীর।

ডেঙ্গি হয়েছে কি না জানার জন্য রক্তের এলাইজা টেস্ট করতে হয়। অথচ ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার ৮টি ব্লকের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। একই ছবি গ্রামীণ ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালেও। ভরসা বলতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মেদিনীপুরের হাতে গোনা এক-দু’টি বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্র।

বৃহস্পতিবার সকালে জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধল বাহিরগ্রামে যান। তিনি গ্রামবাসীদের ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করেন। জ্বর হলে সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের আবেদন জানান। গ্রামবাসীরও পাল্টা অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর মশা মারার স্প্রে করে না। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত। এ দিন জামবনি ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে ৫৮ জন বাসিন্দার রক্তের স্লাইড সংগ্রহ করে পাঠানো হয় মেদিনীপুরে।

তবে স্বাস্থ্য দফতরের খামতির কথা মানছেন না ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার প্রচারে ট্যাবলো গাড়ি এলাকায় ঘুরছে। কিন্তু বাসিন্দারা সচেতন হচ্ছেন না। আমরা মশারি দিচ্ছি। সেই মশারিতে ওঁরা মাছ ধরছেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন