জেলা সভাপতি: বিধায়ক মোস্তাক আলম। নিজস্ব চিত্র
মৌসম বেনজির নুর দল ছাড়ার পরে মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হলেন মোস্তাক আলম। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) তরফে সোমবার এক প্রেস বিবৃতিতে দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল এ কথা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তে কংগ্রেসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গাঁধীও তাঁর অনুমোদন দিয়েছেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। সোমবার সেই প্রেস বিবৃতি জারি হলেও মঙ্গলবার তা প্রকাশ্যে আসে।
আর তারপরেই মালদহে নানা আলোচনায় প্রশ্ন উঠে আসছে, একের পর এক দলত্যাগের ফলে নয়াদিল্লির ১০ জনপথ রোড কি মালদহের কোতোয়ালি বাড়ির উপরে আর আস্থা রাখতে পারছে না?
সেই গনিখান চৌধুরীর সময় থেকেই জেলা কংগ্রেসের এই পদটিতে কোতোয়ালি বাড়িরই কেউ না কেউ বসেছেন। একবার শুধু জেলা সভাপতি হয়েছিলেন সাবিত্রী মিত্র। বাকি সময় হয় রুবি নুর থেকে মৌসম, গনি পরিবারের কেউ না কেউই সভাপতি হয়েছেন। কিন্তু এ বার মৌসম চলে যাওয়ার পরে কিন্তু গনিখানের ভাই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) নন, মোস্তাক আলমকে বেছে নেওয়া হল। এদিন এআইসিসির তরফে মালদহ জেলা কংগ্রেসের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা মহম্মদ জাভেদ বলেন, ‘‘মোস্তাক আলমকে মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
কংগ্রেসেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রদেশ কংগ্রেসের যদিও পছন্দ ছিলেন ডালুবাবুই। প্রদেশ কংগ্রেস শনিবার সে কথা জানিয়েও দেয় বলে কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি। ওই সূত্র জানাচ্ছে, ওই দিনই মালদহের একটি অতিথি আবাসে জেলার সর্বস্তরের দলীয় নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠকেও ডালুবাবুকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কংগ্রেসের নিয়ম মতো, প্রদেশের প্রস্তাব হাইকম্যান্ডের কাছ যায়। তারপরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এআইসিসি-ই নেয়। সেই সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হয় মঙ্গলবার। তখনই জানা যায়, ডালুবাবু নন, সভাপতি হচ্ছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলম।
জেলা কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ডালুবাবু গনি খানের ভাই, তার উপরে সাংসদ। প্রদেশ কংগ্রেসও তাঁর পাশে ছিল। তারপরেও বিধায়ক মোস্তাক আলমকে সভাপতি করায় মনে হচ্ছে, মালদহে কোতোয়ালি পরিবারের উপর এআইসিসি আর ততটা আস্থা রাখছে না। তার প্রধান কারণ, আগে আবু নাসের (লেবু) ও এ বার মৌসম বেনজির তৃণমূলে চলে যাওয়াতেই কোতোয়ালি পরিবারের উপরে এআইসিসি-র আস্থায় চিড় ধরেছে বলে জেলা কংগ্রেসের অনেকেই মনে করছেন।
তবে ডালুবাবুর ছেলে সুজাপুরের বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘‘আমার বাবা ডালুবাবুকে তো এআইসিসি থেকেই প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে জনপথ রোড কোতোয়ালির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে, এমনটা আমার মনে হয় না।’’ সেই সঙ্গেই তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের দলে এআইসিসি-র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে ডালুবাবুকে সভাপতি করার পরে কেন তা পরিবর্তন করা হল, এ নিয়ে আমাদের জিজ্ঞাস্য রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর কাছে তা জানতে চাওয়া হবে।”
ডালুবাবুও বলেন, “আমাকে অ্যাডহক সভাপতি করা হয়েছিল। তবে এ ভাবে কেন পরিবর্তন করা হল, তা নিয়ে সোমেনবাবুর সঙ্গে কথা বলছি।” এর বাইরে এদিন তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া কোতোয়ালি পরিবারের সদস্যা, সাংসদ মৌসম নুর বলেন, “ওটা কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
এআইসিসি থেকে অর্জুন হালদার ও কালীসাধন রায়কে জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। মোস্তাক বলেন, ‘‘সঙ্কটের মুহূর্তেও আমাকে দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা সকলকে নিয়ে পালনের চেষ্টা করব।’’