‘মেয়ে আর আমাকে পাচার করা হচ্ছে!’, স্বামীকে ফোনে বললেন স্ত্রী

ক্যানিং লাইনের জীবনতলার ছোট্ট পরিবারটির কর্ত্রী চার বছরের মেয়ে-সহ বেপাত্তা ছিলেন প্রায় পাঁচ দিন। জীবনতলা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন স্বামী। তার পরেই বুধবার সকালে হঠাৎ আসে ওই ফোন।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৪
Share:

সাতসকালে ফোনটা পেয়ে ধড়মড়িয়ে উঠে বসেন স্বামী। নম্বর অচেনা। ফোনের ও-পার থেকে ভেসে এল স্ত্রীর কণ্ঠ: ‘শোনো, মনে হচ্ছে মেয়ে আর আমাকে পাচার করা হচ্ছে। আমরা এখন কালকা মেলে আছি!’

Advertisement

ক্যানিং লাইনের জীবনতলার ছোট্ট পরিবারটির কর্ত্রী চার বছরের মেয়ে-সহ বেপাত্তা ছিলেন প্রায় পাঁচ দিন। জীবনতলা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন স্বামী। তার পরেই বুধবার সকালে হঠাৎ আসে ওই ফোন। তার সূত্র ধরেই রুদ্ধশ্বাস নাটক। আরপিএফ বা রেলরক্ষী বাহিনীর তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত মোগলসরাই স্টেশনে ট্রেনের কামরা থেকে মা-মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, পাচারকারী সন্দেহে বিবেকানন্দ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উদ্ধার সম্ভব হল ঠিক কী ভাবে?

Advertisement

পাচারকারীর খপ্পরে পড়া মহিলা কোনও ভাবে এক সহযাত্রীর মোবাইল থেকে স্বামীকে ফোনটা করতে পেরেছিলেন। তাঁর স্বামী কোনও ভাবে জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের নম্বর জোগাড় করেন। তাঁর কাছ থেকেই খবর যায় রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরে। আর তার পরেই শুরু হয়ে যায় মা ও শিশুকন্যাকে উদ্ধারের তৎপরতা।

কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। প্রথমে নেট মারফত সরকারি আধিকারিকেরা ট্রেনটির অবস্থান খুঁজে বার করেন। খবর দেওয়া হয় চাইল্ড লাইনগুলিতেও। পাশাপাশি, নানা সূত্র কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট আরপিএফের নম্বর জোগাড় করা হয়। ট্রেনটি অবস্থান জানতে প্রথমে ইলাহাবাদ স্টেশনে ফোন করা হয়। সেখান থেকে জানানো হয়, ট্রেনটি ওই স্টেশনে তখনও ঢোকেনি। এর পর ইলাহাবাদের আগের স্টেশন মির্জাপুরে খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু, সেখান থেকেও জানানো হয় যে ট্রেনটি তখনও মির্জাপুরে আসেনি।

এ বার রেলরক্ষী বাহিনীই ঠিক করে, পরের নিশানা মির্জাপুরের আগের স্টেশন মোগলসরাই। কিন্তু কাজটা সন্তর্পণে সারতে হবে। কারণ, মহিলা তখনও পাচারকারীর জিম্মায়! জনৈক আরপিএফ-কর্তা পরে বলেন, ‘‘কার মোবাইল থেকে মহিলা ফোন করেছিলেন, সেটা পরিষ্কার নয়। সেই নম্বরে ফোন করলে হিতে বিপরীত হবে কি না, বুঝতে না-পেরে আমরা ফোন করার ঝুঁকি নিইনি।’’ অগত্যা মোগলসরাইয়ে ট্রেন থামিয়ে সাধারণ কামরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তখনই শিশুকন্যা-সহ বাঙালি মায়ের খোঁজ মেলে। মোগলসরাই (অধুনা দীনদয়াল উপাধ্যায় ডিভিশন) ডিভিশনের ইনস্পেক্টর বিশ্বনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে ঠিক সময়ে ফোন এসেছিল। সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে ভাল বোঝাপড়াতেই উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।’’

পুলিশ জানায়, মহিলা ৭ ফেব্রুয়ারি মেয়েকে নিয়ে জীবনতলার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। তাঁর স্বামী সে-দিনই থানায় ডায়েরি করেন। এ দিন মহিলাকে উদ্ধারের পরে তাঁর স্বামীকে নিয়েই স্থানীয় পুলিশ মোগলসরাই রওনা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, মহিলা সম্ভবত কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ধৃত যুবকই সেই ব্যক্তি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার হাওড়া থেকে কালকা মেলে ওঠার পরে মহিলার ভুল ভাঙে। মেয়ে আর তাঁকে পাচার করা হচ্ছে বুঝতে পেরেই স্বামীকে ফোন করেন ওই মহিলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন