ছেলে কাছছাড়া, জাগলেন মা

মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত কেঁদে ভাসিয়েছিলেন তিনি। আর রাতটা কাটালেন জেগে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:০১
Share:

শিশু-চুরি: এই মহিলার কাছ থেকেই উদ্ধার হয় নবজাতক।

মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত কেঁদে ভাসিয়েছিলেন তিনি। আর রাতটা কাটালেন জেগে।

Advertisement

আট ঘণ্টার টানাপড়েনের পরে ছেলেকে ফিরে পেয়ে রাতে তো ভাল করে ঘুমোনোর কথা বাগমারির সরস্বতী নস্করের। তবু কেন তাঁকে জেগে কাটাতে হলো রাতটা?

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তাঁর কোলে ছেলে তুলে দেওয়ার পরে পাঁচ দিনের দেবরাজকে কাছছাড়া করতে চাননি মা। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য ছেলেকে মায়ের কোলে দিয়েই শিশুটিকে চিকিৎসকেরা সরিয়ে নিয়ে যান সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)-এ। পাছে কেউ ফের তাঁর এক রত্তি ছেলেটিকে তুলে নিয়ে যায়, সেই আশঙ্কায় সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি মা।

Advertisement

কেন মায়ের থেকে শিশুকে আলাদা করে দেওয়া হলো? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিনভর ধকলের পরে কিছুটা নেতিয়ে পড়েছিল পাঁচ দিনের শিশুটি। সারা দিন তার খাওয়া জোটেনি। তাই রাতে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পরেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এসএনসিইউ-এ।

‘‘বার বার অনুরোধ করেছিলাম, ছেলেটাকে আমার কাছে থাকতে দিন। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা জানিয়ে দিলেন, তা সম্ভব নয়। সারা রাত ছেলে যে ঘরে রয়েছে, সেই দিকে তাকিয়ে জেগে ছিলাম,’’ বুধবার সকালে বললেন সরস্বতী। এ দিনও কয়েক দফায় এসএনসিইউ-এ গিয়েই সন্তানকে দুধ খাইয়ে এসেছেন সরস্বতী। সেখান থেকে বেরোতে ইচ্ছে করছিল না তাঁর। তবে বার বার যে ছেলেকে দেখতে পেয়েছেন, তাতেই কিছুটা শান্তি পেয়েছেন বাগমারির ওই গৃহবধূ।

তাঁর শাশুড়ি রূপা নস্কর বলেন, ‘‘আমার বৌমা সব সময়ে ছটফট করছে। খুব আতঙ্কে রয়েছে ও। বাচ্চাটাকে নিয়ে ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরতে পারলে বাঁচি।’’

কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে ওঁদের? সে সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানাননি। তবে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে তো সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগে। তত দিন কি মা ও শিশুকে হাসপাতালেই রাখা হবে? এর উত্তরেও চুপ করেই থেকেছেন হাসপাতাল সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘ওই সন্তান যে সরস্বতী নস্করেরই, সে বিষয়ে সংশয় নেই। আইনের খাতিরেই ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে। সন্তান পুরোপুরি সুস্থ হলে মায়ের কাছেই থাকবে।’’

সরস্বতীর স্বামী সৌরভ নস্কর মঙ্গলবার চিন্ময়ী বেজের বাড়ি গিয়ে তাঁর কাছে থাকা শিশুর মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন, এ আর কেউ নয়, তাঁর দেবরাজ। বুধবার তাঁকে দেখা গেল— মা-ছেলে ফিরলে কী ভাবে তাদের বরণ করবেন তার পরিকল্পনা তৈরি করছেন সারা দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন