স্বপন ও জয়ন্তী ঘোষ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
শিশু পাচারের অভিযোগে রাস্তায় জুতো পেটা খেতে হয়েছিল তাঁকে। থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছিল।
চিকিৎসক তপনকুমার বিশ্বাসের নানা কীর্তিকলাপে তাঁর উপরে আগেই বিশ্বাস হারিয়েছিলেন অনেকে। সেটা ২০০৯ সালের ঘটনা। কিন্তু ‘ডাক্তারবাবু’ জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার নেমে পড়েছিলেন সহজ রোজগারের রাস্তায়।
শিশু পাচার নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে রাজ্য জুড়ে যে উথালপাথাল চলছে, সেই হাওয়ায় ফের জড়িয়েছে গাইঘাটার তপনের নাম। সিআইডি গ্রেফতার করেছে তাঁকে।
কী হয়েছিল ২০০৯ সালে?
গাইঘাটার শিমুলপুর পঞ্চায়েতের নবগ্রামের বাসিন্দা স্বপন ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী জানালেন বিস্তারিত ঘটনা।
ওই বছর মার্চ নাগাদ সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে পাশেই বড়া গ্রামে ডাক্তারবাবুর কাছে গিয়েছিলেন স্বপনবাবু। দরিদ্র পরিবার। জানালেন, ডাক্তার দেখেশুনে বলে দেন, সকালের আগে প্রসব করানো অসম্ভব। স্ত্রীকে তপনের বাড়িতে চিকিৎসাধীন রেখে চলে আসেন স্বপনবাবু।
কিন্তু মনটা খুঁতখুঁত করছিল। রাতের দিকে ফের হাজির হন ডাক্তারবাবুর বাড়িতে। তাঁর দাবি, গিয়ে দেখেন, তপন কোলে করে এক সদ্যোজাতকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে বলেন, এটা স্বপনবাবুরই ছেলে। কিন্তু অসুস্থ। অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে চিকিৎসার জন্য। গাড়িতে বাড়ির কাউকে সঙ্গে নিতে চাননি তপন। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে স্বপনবাবু পরে জানতে পারেন, ভর্তি করানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হয়েছিল তাঁর।
স্বপনবাবু বলেন, ‘‘ছেলেকে কোথায় ভর্তি রাখা হয়েছে, কবে দেখতে পাব, সে সব নিয়ে ডাক্তারবাবু কোনও কথাই বলতে চাইছিলেন না। পরের কয়েকটা দিন এলাকায় দেখা মেলেনি তার। ফোনও ধরছিলেন না। ফোনে একবার যোগাযোগ হলে উল্টে নানা কটূ কথা বলেন।’’
দিশেহারা স্বপনবাবুরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন। ঘটনার কথা জানান গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু কর্মাধ্যক্ষ কণা গুহকে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওই সময়ে তপনের বাড়ি গিয়েছিলাম। সে জানিয়ে দেয়, স্বপনবাবুর সন্তান জন্মের পরে মারা গিয়েছে। কিন্তু কেন শবদেহ দেখানো হল না, চিকিৎসার জন্য কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কেনই বা বাচ্চাকে দেখতে চাওয়ায় স্বপনবাবুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল, সে সবের ব্যাখ্যা মেলেনি। আমরা ঘোষ পরিবারকে পরামর্শ দিই, পুলিশে অভিযোগ জানাতে।’’ সেই মতো গাইঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের হয় তপনের নামে। ইতিমধ্যে ঠাকুরনগর রেলগেট এলাকায় একদিন তপনের গাড়ি দেখতে পান ঘোষ দম্পতি। ক্ষিপ্ত জয়ন্তীদেবী পা থেকে চটি খুলে গাড়িতে বসা তপনকে কয়েক ঘা মেরে বসেন। গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান ডাক্তার।
তিনিই পরে গাইঘাটা থানায় ঘোষ দম্পতির নামে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর, সোনার চেন ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন। দু’টি অভিযোগেরই তদন্তে নেমে পড়ে পুলিশ। জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় দু’পক্ষই।
কিন্তু এলাকায় রটে যায়, টাকা দিয়ে নিজের সন্তান বিক্রির জন্য স্বপন-জয়ন্তীরা প্রস্তাব দিয়েছিল ডাক্তারকে। তিনি রাজি না হওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ এনে হেনস্থা করা হচ্ছে। সে কথা তুলে এখনও লোকে গঞ্জনা দেয়।
স্বপনবাবুর বলেন, ‘‘আমরা সন্তানহারা হয়েছি। কিন্তু লোককে তা বিশ্বাস করাতে পারিনি। আশা করি, এ বার অন্তত লোকে সত্যিটা জানুক!’’