Student Death

হস্টেলে মৃত্যু হয় ছেলের, যাদবপুরকাণ্ডের সঙ্গে তারও বিচার চাইলেন হুগলির পুত্রহারা মা

মৃত পড়ুয়ার মা মণীষা সাঁতরা জানান, তাঁর ছেলে সুরম্য ২০২২ সালে বিহারের মুজফ্‌ফরপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। থাকতেন হস্টেলে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ১৬:৩০
Share:

২০২২ সালে বিহারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ছেলের। মণীষা সাঁতরার দাবি ওটা খুন ছিল। —নিজস্ব চিত্র।

ভিন্‌রাজ্যে পড়তে গিয়েছিলেন ছেলে। নিয়ম করে প্রতি দিন ফোন করতেন। কিন্তু সে দিন একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। জানানো হয়, হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন তাঁর ছেলে। তাঁর মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু বিচার পাননি। হুগলির শেওড়াফুলির জগৎবন্ধু মুখোপাধ্যায় লেনের বাসিন্দা মণীষা সাঁতরা চান যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার যেন বিচার হয়। বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়ে আর কোনও ছেলেমেয়ের যাতে এ ভাবে মৃত্যু না হয়, আর কোনও মায়ের কোল যেন না খালি হয়, এটাই চান মৃত সুরম্য সাঁতরার মা মণীষা।

Advertisement

সংবাদমাধ্যম থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন মণীষা। তার পর থেকেই তিনি প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছেন, কী পদক্ষেপ করা হল এই ঘটনায়। কারা গ্রেফতার হলেন। মণীষা জানান, তাঁর ছেলে সুরম্য সাঁতরা ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০২২ সালে বিহারের মুজফ্‌ফরপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। থাকতেন হস্টেলে। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙে গেল গত বছরের ২৮ শে জুলাই। মণীষার কথায়, ‘‘সে দিন মাঝরাতে কলেজের হস্টেল থেকে একটা ফোন এল। বলা হল, রাত ৩টে নাগাদ হস্টেলের তিন তলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে সুরম্য। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।’’

পর দিনই পূর্বা এক্সপ্রেস ধরে বিকালের মধ্যে সুরম্যর বাবা সুশান্ত সাঁতরা এবং কাকা বিহারে পৌঁছে যান। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই সুরম্যর দেহ পটনা-কলকাতা সড়কের বক্তিয়ারপুর এলাকায় চলে এসেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স। সেখান থেকে ছাত্রের নিথর দেহ বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মণীষার অভিযোগ, ওটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, খুন। এ নিয়ে মামলা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তার তদন্ত কত দূর এগিয়েছে, তা জানতে পারেননি। বিহার পুলিশের তরফেও আর ‘আপডেট’ পান না। যাদবপুরকাণ্ডে মৃত ছাত্রের পরিবারকেও যেন এই অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে না হয়, সেটাই চাইছেন মণীষা।

Advertisement

মৃত সুরম্যের আত্মীয় তিলকচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমাদের ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে দেহ হস্তান্তর করা হয়েছিল। বলা হয় ময়নাতদন্ত হয়ে গিয়েছে। তাতেই আমাদের সন্দেহ হয় যে, এর মধ্যে রহস্য আছে। কিছু একটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, সেদিন লোডশেডিং ছিল। তাই ৫-৬ জন ছাত্র হস্টেলের ছাদে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই কোনও ভাবে সুরম্য পড়ে যায়। কিন্তু আমাদের মত, এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার তদন্ত চেয়েছি আমরা।’’

মৃত ছাত্রের বাবা সুশান্ত সাঁতরা বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে কয়েক জন সিনিয়র ছাত্র ছিলেন। আমাদের বার বার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, এটা নিছক দুর্ঘটনা। কলেজ খুব দ্রুত সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। একটা সাদা কাগজে ছেলের নাম লিখে দিয়ে দেওয়া হয়। তার পর শেওড়াফুলিতে নিয়ে এসে দাহ হয়।’’ তিনি চান, তাঁর ছেলের ঘটনার মতো যাদবপুরকাণ্ড যেন ‘চাপা না পড়ে যায়।’

মণীষা বলেন, ‘‘বিহারের ডিজিপি, মুজফ্‌ফরপুর আইজি, মুজফ্‌ফরপুরের পুলিশ সুপার এবং সাকরা থানার আইসির কাছে অভিযোগ জানাই আমরা। ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করি। সুরম্যর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ওর বাড়ি দুর্গাপুরে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছু জানা যাবে। কিন্তু বিহার পুলিশ কিছুই করেনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যাদবপুরে ছাত্রের মৃত্যুর পর দেখছি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, পুলিশ— সবাই সক্রিয়। বিচার চাইছেন। কিন্তু আমার ছেলের ক্ষেত্রে এ সব কিছুই হল না। কিন্তু অনেক ছাত্র তো ভিন্‌রাজ্যে পড়তে যাবে। সেখানে যদি এমন ঘটনা হয়, কী হবে? আমার ছেলে আর ফিরবে না। আর যেন কেউ এ ভাবে চলে না যায়, সেটা দেখা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন