বাল্যবিবাহ রুখতে ময়দানে মা বনাম মেয়ে

দক্ষিণ দিনাজপুরের খান্তাপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলের মাঠে এই অভিনব ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। উদ্দেশ্য, বাল্যবিয়ে রুখতে প্রচার। স্লোগানও উঠেছে, ‘অনেক হয়েছে, আর নয়’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কুশমণ্ডি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৭:০৫
Share:

পরম্পরা: বাল্যবিবাহ রুখতে মা-মেয়ের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। দক্ষিণ দিনাজপুরে। ছবি: অমিত মোহান্ত।

এক দিকে বল নিয়ে ছুটছেন মায়েরা। তাঁদের কারও বয়স চল্লিশ পার হয়েছে। কারও কাছাকাছি। বিয়ে হয়েছিল সেই আঠারো না পুরতেই। আর উল্টো দিকে যারা তাঁদের আটকাচ্ছে, তারা এই মায়েদের কন্যাসম। পোশাকি পরিচয় একটা রয়েছে, কন্যাশ্রী ক্লাব।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের খান্তাপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলের মাঠে এই অভিনব ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। উদ্দেশ্য, বাল্যবিয়ে রুখতে প্রচার। স্লোগানও উঠেছে, ‘অনেক হয়েছে, আর নয়’। তার থেকেও বড়, মায়েরা এসে মেয়েদের দলকে বলেছেন, কেন অল্প বয়সে বিয়ে করা উচিত নয়। কী সমস্যা হয় এই বিয়ের ফলে। সকলেই এঁরা স্থানীয় বাসিন্দা। জীবনে ফুটবলে পা ছোঁয়ানো দূরে থাক, মায়ের দল বরাবর মাঠ থেকে দূরেই ছিলেন।

জীবনে প্রথম বার ফুটবলে পাঁ ছোঁয়ানো এমনই এক জন, মধ্য চল্লিশের রীনা সরকার। মাঠে দাঁড়িয়ে জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলছিলেন, ‘‘অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিলে শারীরিক ও মানসিক দুই দিক থেকেই ক্ষতি হয়। অনেক সময় জীবনহানিও হয়।’’ তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে অন্য মায়েরাও বললেন, ‘‘গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এই বিষয়ে সচেতন নয়। আমরা প্রতিবন্ধকতা থেকে শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের বলছি, বাল্যবিবাহ আর নয়।’’

Advertisement

কন্যাশ্রী মেয়ে স্বপ্না রায়, সান্ত্বনা সরকার, বুল্টি রায়রাও ‘মায়েদের’ সঙ্গে সহমত। তাদের কথায়, ‘‘এখন লেখাপড়ার জন্য সরকার সাহায্য করছে। আমরাও সব বুঝতে শিখেছি। তাই নিজেদের গ্রামে বাল্যবিবাহ রুখবই।’’

কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রত্যন্ত খান্তাপাড়া কেন? প্রশাসন সূত্রে বক্তব্য, কুশমণ্ডি ব্লকের করঞ্জি গ্রাম পঞ্চায়েতের এই সব এলাকা আদিবাসী ও রাজবংশী সম্প্রদায় অধ্যুষিত। এখআনে শিক্ষার হারও তুলনামূলক ভাবে কম। তাই মাঝে মধ্যেই এখান থেকে বাল্যবিয়ের খবর আসে প্রশাসনের কাছে। কিছু দিন আগেই তিনটি মেয়ের বিয়ে আটকায় প্রশাসন। তাই এই এলাকায় জোরদার প্রচার শুরু করেছে প্রশাসন। এবং প্রশাসনকে চমকে দিয়ে এ দিনের ফুটবলে মেয়েদের সঙ্গে হাজির মায়ের দলও। কুশমণ্ডির বিডিও অমূল্য সরকারও জানালেন, এমন সাড়া পাওয়ায় তাঁরা ‘অভিভূত’।

খেলায় মায়েদের এক গোলে হারিয়েছে মেয়েরা। কিন্তু জীবনের খেলায় তো মায়েরাই জিতিয়ে দিলেন মেয়েদের, নিজেদের অমূল্য অভিজ্ঞতা জানিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন