চার্জশিট থেকে আগেও বাদ পড়ে মৃত্যুঞ্জয়ের নাম

সিপিএমের উপরে হামলার অভিযোগে হাড়োয়ার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী, মিনাখাঁর বিধায়ক উষারানির নাম চার্জশিট থেকে বাদ পড়ায় বিস্মিত নন হাড়োয়ার মানুষ। এর আগে জোড়া খুনের মামলাতেও চার্জশিট থেকে মৃত্যুঞ্জয়ের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সে বার মামলার তদন্তভার ছিল সিআইডির হাতে।

Advertisement

নির্মল বসু

হাড়োয়া শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪২
Share:

সিপিএমের উপরে হামলার অভিযোগে হাড়োয়ার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী, মিনাখাঁর বিধায়ক উষারানির নাম চার্জশিট থেকে বাদ পড়ায় বিস্মিত নন হাড়োয়ার মানুষ। এর আগে জোড়া খুনের মামলাতেও চার্জশিট থেকে মৃত্যুঞ্জয়ের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সে বার মামলার তদন্তভার ছিল সিআইডির হাতে।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের মতোই হাড়োয়ার ভেড়ি এলাকার দখল নিয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ইতিহাস বহু পুরনো। বাম আমলে স্বভাবতই রাশ ছিল সিপিএমের হাতে। অবৈধ ভেড়ি এলাকার কাঁচা টাকার দখল রাখতে সিপিএমও সে সময়ে কম অত্যচার করেনি, বলছেন এলাকার মানুষ জন। বেশ কয়েক বছর স্থানীয় সোনাপুকুর-শঙ্করপুর পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন সিপিএমের দীনবন্ধু মণ্ডল। তিনি আবার সম্পর্কে মৃত্যুঞ্জয়ের আত্মীয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, দু’জনে পৃথক রাজনৈতিক শিবিরে অবস্থান করলেও ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা কম ছিল না একটা সময়ে। সে সময়ে মৃত্যুঞ্জয় ছিলেন কংগ্রেসে। পরে যোগ দেন তৃণমূলে।

ভেড়ি এলাকার নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘ দিন ছিল দীনবন্ধুবাবুর হাতেই। কিন্তু রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ায় ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে এলাকায় প্রভাব কমতে থাকে তাঁর। মাথা চাড়া দিতে থাকে তৃণমূল। সেই সূত্রে ভেড়ি এলাকার দখল পেতে মরিয়া মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও অবনতি হতে থাকে। নতুন করে বোমা-গুলির লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয় এলাকা।

Advertisement

২০০৯ সালের ১৮ জুলাই মাছ চুরি ধরতে এসে নিখোঁজ হন দীপঙ্কর নস্কর ও বিশ্বজিত্‌ মণ্ডল নামে দুই যুবক। দু’দিনের মাথায় হাড়োয়ার কুলটির কাছে বাগজোলা খালে তাঁদের দেহ মেলে। দু’জনকেই নিজেদের দলের বলে দাবি করে সিপিএম ও তৃণমূল। ওই ঘটনায় মৃত্যুঞ্জয়বাবু ও দীনবন্ধুবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। তদন্তে নামে পুলিশ।

ওই ঘটনায় দীপঙ্করের কাকা কালীপদ নস্কর মৃত্যুঞ্জয় ও দীনবন্ধু-সহ ১৫ জনের নামে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। কয়েক দিনের মধ্যেই অপহৃত হন কালীপদবাবু। পরে অবশ্য ফিরেও আসেন। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে পুরো মামলার তদন্তভার নেয় সিআইডি।

চলতি বছরে মাস কয়েক আগেই হাইকোর্টে চার্জশিট জমা দেয় তারা। সেখানে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর নাম ছিল না। মৃত্যুঞ্জয়ের আইনজীবী বিকাশ ঘোষ জানান, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছিল খুন-অপহরণের অভিযোগে। সিআইডি তদন্তে নেমে জানতে পারে, ওই ঘটনায় কোনও ভাবেই যুক্ত নন তাঁর মক্কেল। সে জন্যই চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। ১২ মে ভোটের দিন হাড়োয়ার গ্রামে সিপিএমের উপরে হামলার ঘটনাতেও একই যুক্তিতে মৃত্যুঞ্জয়ের নাম চার্জশিট থেকে বাদ গিয়েছে বলেও রবিবার জানিয়েছেন বিকাশবাবু।

সোনাপুকুর হাইস্কুলের ভূগোলের মাস্টারমশাই মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে শুধু এ দু’টি মামলাই নয়, আরও নানা সময়ে নানা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাঁর টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। ২০১১ সালে স্ত্রী উষারানি মিনাখাঁর বিধায়ক হওয়ার পরে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর প্রভাব-প্রতিপত্তি আরও বাড়ে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে সোনাপুকুর-শঙ্করপুর পঞ্চায়েতটির দখলও নেয় তৃণমূল। ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকে সিপিএম।

দীনবন্ধুবাবুর অভিযোগ, শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা ২০০৯ লোকসভা ভোটের পর থেকেই হাড়োয়ার গ্রামে গ্রামে অত্যাচার চালাচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে বাম কর্মী-সমর্থকদের। অনেককে সালিশি বসিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে অত্যাচারের মাত্রা। এ সবের পিছনে প্রত্যক্ষ মদত আছে মৃত্যুঞ্জয়ের। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকার সুবাদে পার পেয়ে যাচ্ছেন ওই তৃণমূল নেতা। অভিযোগ স্বভাবতই মানেননি মৃত্যুঞ্জয়বাবু। তাঁর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। যদিও এর আগে একাধিক বার তিনি জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে বার বার ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে বামেরা। কিন্তু আইন সঠিক দিশায় এগোচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন