দাওয়াইয়ে মিটবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বাঁকুড়া সফরে বার্তা মুকুলের

সোনামুখীর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানলেন। কিন্তু ‘দাওয়াই’ দিয়ে সে সমস্যা মেটানোর বার্তাও দিয়ে গেলেন সাংসদ মুকুল রায়। সোমবার বাঁকুড়া সফরে তাঁর ওই বার্তা জেলা তৃণমূলের অন্দরের ফাঁকফোকর ভরাটের কাজ করবে, এমনই আশা দলের অনেক জেলা নেতা-নেত্রীর।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫০
Share:

শরণাগত। বাঁকুড়ার সতীঘাটে ছিন্নমস্তার মন্দিরে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ।

সোনামুখীর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানলেন। কিন্তু ‘দাওয়াই’ দিয়ে সে সমস্যা মেটানোর বার্তাও দিয়ে গেলেন সাংসদ মুকুল রায়। সোমবার বাঁকুড়া সফরে তাঁর ওই বার্তা জেলা তৃণমূলের অন্দরের ফাঁকফোকর ভরাটের কাজ করবে, এমনই আশা দলের অনেক জেলা নেতা-নেত্রীর।

Advertisement

সম্প্রতি সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা ও তৃণমূলের পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা অন্য মাত্রা নিয়েছে। এক সক্রিয় তৃণমূল-কর্মীর অন্তঃসত্ত্বা দিদির পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে গোষ্ঠী রাজনীতিতে বিরোধী শিবিরের এক মহিলা নেত্রী ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।

পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এ দিন রানিবাঁধের অম্বিকা মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন মুকুলবাবু। পরে বুঝিয়ে দেন, সোনামুখী-কাণ্ড তাঁর অজানা নয়। তিনি বলেন, “বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বিধানসভায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমস্যা রয়েছে। এ জেলার সোনামুখীও তেমনই একটি বিক্ষিপ্ত বিধানসভা। কিন্তু ভোটে গোটা রাজ্যের সার্বিক ফলে তার কোনও ছাপ পড়বে না। তৃণমূল আরও বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরবে।”

Advertisement

বাঁকুড়ার সোনামুখী, পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুর, রাইপুর, সিমলাপাল, গঙ্গাজলঘাটি, ছাতনার মতো বহু ব্লকেই একাধিক বার শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও অস্ত্রশস্ত্র হাতে তৃণমূল কর্মীরা একে অপরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, কোথাও পাঠাগার বা সমবায়ের পরিচালন কমিটির নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই নির্দল কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিরুদ্ধ শিবিরের লোকজন।

সোনামুখীতে তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল অবশ্য আরও উচ্চগ্রামে উঠেছে। দাম্পত্য সমস্যায় মধ্যস্থতার নামে সুরজিৎ-অনুগামী সোনামুখী পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিসার আলম আনসারির বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ মহিলা তৃণমূল নেত্রী পুতুল গড়াইয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, গত রবিবার পুতুল-সহ জনা ৩৫ মহিলা নিসারের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা দিদি সাহানা বেগমের পেটে লাথি মারে এবং মা সাবিনা বেগমকে বাড়ি থেকে টানতে টানতে রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে যায়। ঘটনার দিন সোনামুখী থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও পুতুলকে সোমবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে নিসারের পরিবারকে নিয়ে সুরজিৎ-শিবির গত বুধবার থানায় অবস্থানে বসে। সুরজিৎবাবু নিজেও থানায় গিয়ে অবস্থানকারীদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে আসেন ও পুতুলকে ধরার দাবি তোলেন। যদিও বিধায়ক দীপালিদেবী পুতুলের পক্ষেই সওয়াল করে তাঁকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। শাসক দলের একটি অংশের অভিযোগ, বিধায়কের চাপেই পুলিশ পুতুলকে ধরছে না। যদিও পুলিশের দাবি, পুতুল পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে।

সোনামুখী বিধানসভা কেন্দ্রের ‘এ ধরনের’ ঘটনা জেলার অন্য বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারদের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মানছেন মুকুলবাবু। তবে তাঁর বক্তব্য, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তো চলতে দেওয়া যায় না। আমরা তা রুখবই। মূল সমস্যাটা খুঁজে বার করে দাওয়াই দিতে হবে।” দ্বন্দ্ব এড়াতে শাসক দল ঠিক কোন দাওয়াই দেওয়ার পক্ষপাতী তা অবশ্য খোলসা করেননি তিনি।

তৃণমূলে মুকুলের অনুগামীদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সোনামুখীতে অভিযোগ পাওয়ার পরে, পুতুলকে সোনামুখী শহর সভানেত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মহিলা তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। সেই সূত্রেই তাঁদের ধারণা, বিধানসভা ভোটের আগে ‘দাওয়াই’ বস্তুটি খুব মিঠে হবে না। সুরজিৎবাবু বা দীপালিদেবী অবশ্য ‘দাওয়াই’ প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি।

বুথ স্তরের অনুগামীরা এ দিন মুকুলবাবুর আসার খবর পেয়ে দেখা করতে ছুটে এসেছেন। অম্বিকা নগরের তৃণমূল নেতা উত্তম কুম্ভকার, বিবেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের কথায়, “উনি অনেক দিন পরে জেলায় এলেন। মাঝে কিছু দিন দাদাকে দলের সঙ্গে দেখা যেত না বলে আমরা ঝিমিয়ে পড়েছিলাম। উনি নতুন উদ্যমে ফেরায় আমরা ভীষণ খুশি।”

বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার কৌশলের ‘বীজমন্ত্র’ গল্পচ্ছলেই এ দিন কর্মীদের কাছে বারবার বলে গিয়েছেন মুকুলও। তাঁর কথায়, “উন্নয়নের প্রশ্নে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম আমল ও পরিবর্তনের গত সাড়ে চার বছরের তুলনামূলক পরিসংখ্যান মানুষের কাছে তুলে ধরলেই হবে। কাজের নিরিখেই তৃণমূল জিতবে।”

অম্বিকা নগরে পুজো দেওয়ার পরে দুপুরে খাতড়ায় মধ্যাহ্নভোজন করেন মুকুলবাবু। পরে বাঁকুড়া শহরের পাটপুর, ভৈরবস্থান ও সতীঘাট এলাকার লোকনাথ মন্দির, শিবমন্দির ও হনুমান মন্দিরে পুজো দেন। বাঁকুড়া শহরে মুকুলবাবুর সঙ্গে দেখা করেন জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী শম্পা দরিপা। বাঁকুড়া শহর থেকে মুকুলবাবু বিষ্ণুপুরে যান। রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে অবশ্য তাঁর সঙ্গে দেখা যায়নি। মুকুলবাবু পরে বলেন, “এ বারের সফর নিয়ে আমি কাউকে কিছু জানাইনি। তার পরেও এত মানুষ দেখা করতে এসেছেন দেখে খুব ভাল লাগছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন