বাবার জন্য বিলপাড়ে সারাটা দিন

১৯৮২ সালে ভাণ্ডারদহ বিলের উপরে তৈরি হয়েছিল এই সেতুটি। নাম দেওয়া হয় নলিনী বাগচী সেতু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

একে-একে অনেক দেহ উঠেছে। বুধবারও মিলেছে একটি দেহ। কিন্তু ডোমকল থেকে বাসে চড়া হাজি আব্দুল মালেকের দেহ মেলেনি। সারা দিন বিলের ধারে ঠায় অপেক্ষা করে হয়রান তাঁর বাড়ির লোকজন। তিনি যে বেঁচে আছেন, এমন আশা আঁকড়ে থাকা শক্ত। কিন্তু প্রিয়জনেরা আশা ছাড়েনই বা কী করে?

Advertisement

সোমবার সকালে ভাণ্ডারদহ বিলে বাস তলিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল খোঁজ। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৪২টি মৃতদেহের খোঁজ মিলেছিল। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত খোঁজ ছিল না জলঙ্গির হোগলার দাঁড় এলাকার ঋষিকেশ শর্মার (২৩)। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তল্লাশির সময়ে তাঁর দেহ মেলে। পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত করিয়ে মৃতদেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

জল থেকে এক জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে শুনে এ দিন আব্দুল মালেকের ছেলেমেয়েরা বলের পাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। পরে দেখা যায়, সেটা ঋষিকেশের দেহ। তল্লাশিতে বিকেল গড়িয়ে গেলে প্রশাসনের লোকজন তাঁদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফের খোঁজাখুঁজি শুরু হবে।

Advertisement

সোমবার প্রথমে জেলা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট-এর লোকজন উদ্ধারের কাজে নেমেছিলেন। পরে কৃষ্ণনগর থেকে ডুবুরিরা আসেন। শেষমেশ হরিণঘাটা থেকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ)-এর দল আসার পরে প্রকৃত অর্থে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। এনডিআরএফ এ দিনও স্পিডবোট নিয়ে বিলের জল তোলপাড় করে। পরে ডুবুরি নামে। দফায়-দফায় চেষ্টার পরে ঋষিকেশের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বেলা বাড়তেই বহরমপুরের বিষ্ণুপুর বিলে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন মৎস্যজীবী এবং তাঁদের জাল নিয়ে যায় প্রশাসন। সন্ধে পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি চলে।

পরিবার সূত্রে খবর, মেহেদিপুরের আব্দুল মালেক বহরমপুরে যাচ্ছিলেন জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। তাঁর বড় ছেলে মতিয়ার রহমান জানান, বাস জলে পড়ার খবর পেয়ে সেই যে তাঁরা দৌলতাবাদ এসেছিলেন, সেই থেকে তাঁদের খাওয়া-ঘুম মাথায় উঠেছে। এ দিনও তাঁরা ছয় ভাইবোন দিনভর বালির ঘাট এলাকায় পড়ে থেকেছেন। পাড়ায় অধীর অপেক্ষায় আছেন তাঁদের পড়শি-পরিজনেরাও।

১৯৮২ সালে ভাণ্ডারদহ বিলের উপরে তৈরি হয়েছিল এই সেতুটি। নাম দেওয়া হয় নলিনী বাগচী সেতু। যদিও এলাকার মানুষের কাছে তা বালির ঘাটের সেতু বলেই পরিচিত। তার ভাঙা রেলিংগুলি আপাতত শাল খুঁটি দিয়ে ঘেরা আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত সেটি সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন।

সোমবার রাতে দিল্লি থেকে ফিরে সোজা সেতুতে এসেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। মঙ্গলবারও ফের যান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গোটা সেতু এমন খন্দে ভরা যে ভাল গাড়িও নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। আলোও তো নেই!’’ পূর্ত দফতরের (বহরমপুর ডিভিশন-২) জেলা নির্বাহী বাস্তুকার অদ্রীশ চৌধুরী জানান, সেতুর উপরে রেলিং দিয়ে ফুটপাথও আলাদা করে দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞেরা এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরেই সংস্কার শুরু হবে। আলো জ্বালানোর বিষয়টি যদিও বিদ্যুৎ দফতরের দেখার কথা, তবু তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন