মুসা দেশবিরোধী হলে শাস্তি পাক, অনড় বাবা

পাড়ায় ঢোকার মুখে ছোট ছোট জটলা। জনা দশেকের ভিড় বাড়ির সামনেও। কিন্তু মঙ্গলবার বীরভূমের লাভপুর ব্লক অফিস লাগোয়া রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ার সেই জটলা ‘মুসা’কে নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। বড় জোর ‘চিনি’ বা ‘পাড়াতেই বাড়ি’—এটুকু বলেই পাতলা হয়ে গিয়েছে ভিড়।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

লাভপুরের বাড়িতে মুসার বাবা নাসিমউদ্দিন মিয়াঁ। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

পাড়ায় ঢোকার মুখে ছোট ছোট জটলা। জনা দশেকের ভিড় বাড়ির সামনেও। কিন্তু মঙ্গলবার বীরভূমের লাভপুর ব্লক অফিস লাগোয়া রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ার সেই জটলা ‘মুসা’কে নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। বড় জোর ‘চিনি’ বা ‘পাড়াতেই বাড়ি’—এটুকু বলেই পাতলা হয়ে গিয়েছে ভিড়।

Advertisement

মুসা বা শেখ মসিউদ্দিন মিয়ঁাকে সোমবার রাতে বর্ধমান স্টেশনে ট্রেন থেকে আটক করে পুলিশ। পরে কলকাতায় এনে তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ার বাসিন্দা নাসিমউদ্দিন মিয়ঁা সে খবর পান এলাকার মসজিদের ইমামের কাছে। ইমামের সহকারী নাসিমউদ্দিনেরই মেজ ছেলে মুসা।

মসজিদেই দেখা নাসিমউদ্দিনের সঙ্গে। নমাজের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন বছর বাষট্টির বৃদ্ধ। জানালেন, পাঁচ ছেলে তাঁর। বছর আঠাশের মুসা স্থানীয় স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পাস কোর্সে ভর্তি হয়।
কিন্তু পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেনি। বড় ভাই মিনহাজউদ্দিন ও সেজ ভাই আসাদুল্লার মতো মুসাও কর্মসূত্রে সপরিবার বাইরে থাকে। তবে নাসিমউদ্দিনের ছোট দুই ছেলে লাভপুরেরই এক মাদ্রাসায় পড়ছে।

Advertisement

বছর সাতেক আগে পাড়া থেকে বড়জোর আধ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমপাড়ায় বিয়ে হয় মুসার। স্ত্রী সায়রা বানুকে নিয়ে পাঁচ বছর আগে সে এলাকা ছাড়ে। নাসিমউদ্দিনের দাবি, ‘‘সে সময় মুসা বলেছিল, তামিলনাড়ুতে যাচ্ছে। পরে জানিয়েছে, ওখানে মুদির দোকান খুলেছে ও।’’ তিনি জানান, এখন দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে মুসা বছরে দু’-এক বার লাভপুরে আসে। তবে শ্বশুরবাড়িতে ওঠে। শেষ এসেছিল মাস চারেক আগে। নাসিমউদ্দিনের কথায়, ‘‘দিন দশেক আগে ফোন করে মুসা ইদে আসবে বলেছিল। তাই আশায় ছিলাম, এ বার শ্বশুরবাড়িতে এলে হয়তো বাড়িতেও আসবে!’’

লাভপুর-পশ্চিমপাড়ায় মুসার শ্বশুরবাড়িতে এ দিন দেখা মিলেছে শাশুড়ি আনাবিবির। তিনি জামাইয়ের ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তবে পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শ্বশুরবাড়িতে মুসার কাছে বাইরের লোকজন যাতায়াত করত। মুসা তাদের ‘বন্ধু’ বলে পরিচয় দিত।

মসজিদ থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে নাসিমউদ্দিনের বাড়ি। দোতলা, তবে প্লাস্টার হয়নি। সেখানে মুসার মা জাকিরাবিবি বললেন, ‘‘স্বামী ধর্মপ্রাণ মানুষ। ওঁর আয়েই সংসার চলে। বড় তিন ছেলেই মাঝে মাঝে কিছু
টাকা পাঠায়। মুসাও পাঠায়। কিন্তু আমরা জানতাম, সেটা মুদি
দোকানের আয়।’’ নাসিমউদ্দিন জুড়ছেন, ‘‘ছেলে জঙ্গি কি না, জানি না। তবে ও যদি দেশবিরোধী কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে, তা হলে বাবা হয়ে ওর উপযুক্ত শাস্তি চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন