এই সেচখালের জল থেকেই দেহ মিলেছিল ওই ছাত্রীর।—ফাইল চিত্র।
তদন্তে প্রকৃত তথ্য উঠে আসেনি জানিয়ে নবাবহাটের কিশোরীকে গণধর্ষণ কাণ্ডে বেকসুর খালাসের রায় দিলেন বিচারক। শুক্রবার বর্ধমানে নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার জন্য গঠিত বিশেষ আদালতের বিচারক বৈদ্যনাথ ভাদুড়ি ওই রায় দেন। বিচারক আরও জানিয়েছেন, পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের যে মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করেছিল তা যেন ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর সাইকেলে টিউশন থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় ওই কিশোরী। এক দিন পরে শিবপুর দিঘির পাড়ে সাবান কারখানার সামনে সেচখালের পাশ থেকে তার একপাটি চটি মেলে। বর্ধমান থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন ওই তরুণীর মা। তারও পরের দিন সেচখালের জল থেকেই ওই কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়, গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই কিশোরীকে। ঘটনার পরে শহর জুড়ে একাধিক মিছিল, প্রতিবাদ সভা হয়। জানা যায়, ধর্ষণের পরে ওই তরুণীর দেহ স্থানীয় একটি নির্মীয়মাণ নার্সিংহোমে রাখা হয়েছিল। সেখানেও তল্লাশি চলে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে তদন্তের ভার নেয় সিআইডি।
শুনানি শুরু হতেই ওই ছাত্রীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর পরিবারের লোকেরা দাবি করেন, সাক্ষ্য দিতে না যাওয়ার জন্য ভয় দেখাতেই এ কাজ করা হয়েছে। পরে মামলা চলাকালীন অনেক সাক্ষীই বিরূপ হন। যে সাবান কারকানার সামনে থেকে মেয়েটির চটি মিলেছিল তাঁর মালিক ও তাঁর ছেলেও প্রথমে দাবি করেছিলেন, ওই রাতে মেয়েটির চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন তাঁরা। যদিও আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে সে প্রসঙ্গ আর ওঠেনি। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ২৫ জন সাক্ষ্য দেবেন বলে আদালতকে জানিয়েছিল সিআইডি। যার মধ্যে ওই কিশোরীর বাবা-মা, পুলিশ ও চিকিৎসকরা ছিলেন। সিআইডি-র আইনজীবী অরূপ দাস বলেন, “সাক্ষীরা আদালতে ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানায়নি। বরং কয়েকজন বিরূপ সাক্ষী হয়েছিলেন। মৃতার বাবা-মাও আদালতকে সম্পূর্ণ ভাবে সাহায্য করেননি। আর বিচারকও মনে করেছেন, সিআইডি সঠিকভাবে এই মামলায় তদন্ত করেনি।”
বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়েছেন, কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করার পরে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় তিন জন তদন্তকারী অফিসার তদন্ত করলেও প্রকৃত তদন্ত করেননি। তদন্তে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারেননি তদন্তকারী অফিসাররা। ফলে এই তদন্তের মধ্যে দিয়ে প্রকৃত অপরাধী কারা তা বোঝা গেল না।