স্নাতক হলেই স্কুলে ইন্টার্ন: মমতা

সরকারি হাসপাতালে প্রাত্যহিক পরিষেবার একটা বড় অংশ সামলান ইন্টার্নেরা। পশ্চিমবঙ্গের যে-সব স্কুলে শিক্ষক-সংখ্যা খুবই কম, সেখানে নতুন পাশ করা স্নাতকদের ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগ করে পঠনপাঠনের সমস্যা সামাল দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০২
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

সরকারি হাসপাতালে প্রাত্যহিক পরিষেবার একটা বড় অংশ সামলান ইন্টার্নেরা। পশ্চিমবঙ্গের যে-সব স্কুলে শিক্ষক-সংখ্যা খুবই কম, সেখানে নতুন পাশ করা স্নাতকদের ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগ করে পঠনপাঠনের সমস্যা সামাল দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্ন সভাঘরে এক শিক্ষা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানান।

Advertisement

বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও কোনও জায়গায় টিচার আছেন তো ছাত্র নেই। কোথাও আবার ছাত্র আছে, টিচার নেই। ভারসাম্যের অভাব আছে। কয়েকটা জায়গা— যেমন সুন্দরবন, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরের পশ্চিমাঞ্চলের কিছুটা এবং ডুয়ার্সের কিছুটা একেবারেই অন্ধকার। একটা প্রোপোজ়াল (প্রস্তাব) ভেবে দেখেছি।’’ কী প্রস্তাব? মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলেজ থেকে পাশ করার পরে পড়ুয়াদের দু’বছর করে ইন্টার্ন হিসেবে কাজে লাগানোর বিষয়টি ভেবে দেখছেন তাঁরা। সদ্য-স্নাতকদের কাজে লাগালে পড়ুয়াদের উপকার হবে। শংসাপত্র দেওয়া হবে ওই ইন্টার্নদের। পড়ানোয় দক্ষতা দেখালে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকারও দেওয়া হবে।

প্রাথমিক স্কুলে যাঁরা ইন্টার্নশিপ করবেন, তাঁদের ন্যূনতম যোগ্যতা হতে হবে কলেজ পাশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়াতে চাইলে থাকতে হবে অনার্স বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রাথমিকে ইন্টার্নদের মাসে ২০০০ টাকা দেওয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে মিলবে ২৫০০ টাকা। ভাল কাজ করলে ভাতা দ্বিগুণও করা হতে পারে। ‘‘দেওয়া হবে শংসাপত্র। তাঁদের মুকুটে এই পালকও জুটবে,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষক-ঘাটতির মোকাবিলায় পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিক বিভাগের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। বস্তুত, এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। চলতি মাসেই এই বিষয়ে বৈঠক হওয়ার কথা।

Advertisement

আরও পড়ুন: রিভিউ বৈঠকে পার্থকে তুলোধোনা, অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি কলেজগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী

বৈঠকে স্কুলে পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনায় শৌচাগারের প্রশ্ন ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সব স্কুলে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগার চাই। এই বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে না বলে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, শৌচাগার-সহ পরিকাঠামোর বিষয়টি জেলা স্কুল পরিদর্শকের হাতে ছেড়ে দিলে হবে না। এগুলো নিয়মিত দেখতে হবে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার আধিকারিকদের। পাশে বসা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং স্কুলশিক্ষা কর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি জেলায় যেতে পারি, আপনারা যাবেন না কেন?’’

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কন্যাশ্রীর জন্য ছাত্রী-সংখ্যা ৭৩% বেড়েছে। ছাত্রী ভর্তি ৫.৬২ লক্ষ থেকে হয়েছে ৯.৭৪ লক্ষ। কন্যাশ্রীরা পরীক্ষায় প্রথম হচ্ছে, ভাটনগর পুরস্কারও পাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পরেই ইন্টার্ন নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে শিক্ষা শিবিরে। এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কর্মপদ্ধতিকেই তো নস্যাৎ করে দেওয়া হল। মেধাবী যোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষক হওয়ার কথা। কিন্তু এই ব্যবস্থায় সেই বিষয়টিই তো আর থাকবে না।’’ পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের বক্তব্য, শিক্ষার অধিকার আইনে সরকার এ ভাবে স্কুলে ইন্টার্ন নিয়োগের কথা বলতে পারে না। রাজ্যের পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের ভগীরথ ঘোষের মতে, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন এবং শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব নয়। ‘‘এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ লক্ষ লক্ষ বেকারকে বঞ্চিত করার এ এক সুনিপুণ প্রয়াস,’’ বলেন ভগীরথবাবু। সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু চান, শিক্ষকের চাকরির বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আগে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হোক, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর উল্লিখিত অঞ্চলগুলিতে চাকরি করতে যেতে রাজি আছেন কি না। তার পরে ইন্টার্নশিপের কথা ভাবা হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন