দু’মুঠো ভাতের জন্য গায়ে কেউ আগুন ধরায়!

তার দেখা নেই, মাসখানেক হয়ে গিয়েছে। দিনরাত দুশ্চিন্তা। রবিবার সকালে সেই ‘হারানো’ স্বামীর ঝলসানো শরীরটা দেখেই চমকে উঠেছিলেন ইরিনা বিবি। সাগরদিঘির ফুলবাড়ি গ্রামের উঠোনে দাঁড়িয়ে ইরিনা বলছেন, ‘‘লোকটা মানসিক ভাবে টলোমলো, হয়তো হোটেলে দু’মুঠো ভাত চেয়েছিল। সে জন্য এমন অত্যাচার করে কেউ!’’

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৫
Share:

স্বামীর কথা শোনাচ্ছেন এরিনা। নিজস্ব চিত্র

তার দেখা নেই, মাসখানেক হয়ে গিয়েছে। দিনরাত দুশ্চিন্তা।

Advertisement

রবিবার সকালে সেই ‘হারানো’ স্বামীর ঝলসানো শরীরটা দেখেই চমকে উঠেছিলেন ইরিনা বিবি।

সাগরদিঘির ফুলবাড়ি গ্রামের উঠোনে দাঁড়িয়ে ইরিনা বলছেন, ‘‘লোকটা মানসিক ভাবে টলোমলো, হয়তো হোটেলে দু’মুঠো ভাত চেয়েছিল। সে জন্য এমন অত্যাচার করে কেউ!’’

Advertisement

দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে শুক্রবার রাতে আলিমুদ্দিন শেখ নামে ওই যুবকের গায়ে আগুন ধরানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি হোটেল মালিক সুভাষ অধিকারী ও তার দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে। আলিমুদ্দিন এখন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে, সুভাষ ও তার ওই কর্মচারী সুবীর সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে আটকে রেখে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টা-সহ পাঁচটি বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

বেশ কিছু দিন ধরেই ঘরছাড়া আলিমুদ্দিন দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে ঘোরাফেরা করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বছর পঁয়তিরিশের ছেলেটিকে তাঁরা, নিত্যযাত্রী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই খাবার দিতেন। তাঁরা জানান, সারা দিন চিৎকার করে গান করত ছেলেটি। ব্যাস এইটুকুই। তাঁ

তবে শুক্রবার রাতে আলিমুদ্দিন সুভাষের হোটেলের সামনে গিয়ে বসেছিল। প্রথমে তাঁকে উত্ত্যক্ত করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তাতে না যাওয়ায়, এ বার তার পিছনে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিছু অটোচালকের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ আলিমুদ্দিনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই অটোচালকদের দাবি, সুভাষ তাঁদের জানিয়েছিলেন, মজা করতে গিয়ে এমন ঘটে গিয়েছে।

রবিবার ফুলবাড়ি গ্রামে বাপের বাড়িতে বসে আলিমুদ্দিনের স্ত্রী জানান, বছর বারো আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের এক ছেলে আর একটি মেয়ে রয়েছে। আলিমুদ্দিন রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বছর তিনেক আগে থেকে হঠাৎই তাঁর মানসিকস্থিতি নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর বাবা বলেন, ‘‘চিকিৎসা চলছিল। এক বার অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল ছেলেটা। কিন্তু তার পরে আবার সমস্যা শুরু হয়।’’ ভবঘুরে আবাসে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকেই পালিয়ে গিয়েছিল সে।

ইরিনা জানান, স্বামীর চিকিৎসায় সর্বস্ব গিয়েছে তাঁদের। বিড়ি বেঁধে এখন সংসার চালান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামী নিখোঁজের পর থেকেই ভাবনায় থাকি, কোনও দুর্ঘটনার খবর না আসে! কিন্তু কেউ এ ভাবে মজা করতে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে দেবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন