গাংনাপুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ,  মৃত দুই

রবিবার দুপুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হল দু’জনের। তার মধ্যে এক জন কারখানার মালিক। জখম হয়েছেন দু’জন। কারখানার ৩৫ জন কর্মীর প্রায় সকলেই দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। না হলে হতাহতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাংনাপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৮
Share:

বাজি কারখানার আগুন নেভাচ্ছেন দমকলের কর্মীরা। রবিবার গাংনাপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

ঘড়ির কাঁটা সবে দুপুর আড়াইটে ছুঁইছুঁই। পরপর দু’টো বিকট শব্দে কেঁপে উঠল গাংনাপুর।

Advertisement

রবিবার দুপুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হল দু’জনের। তার মধ্যে এক জন কারখানার মালিক। জখম হয়েছেন দু’জন। কারখানার ৩৫ জন কর্মীর প্রায় সকলেই দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। না হলে হতাহতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারত।

বিস্ফোরণের তীব্রতায় কারখানাটি তো ধ্বংস্তূপের চেহারা নিয়েছেই, আশপাশের অন্তত দশটি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে পড়েছে। সামনে দাঁড় করানো ছিল একটি গাড়ি। সেটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে রানাঘাট থেকে দমকলের ইঞ্জিন যায়। পরে কৃষ্ণনগর এবং কল্যাণী থেকেও ইঞ্জিন আসে। চারটি ইঞ্জিন বহুক্ষণের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন কারখানার মালিক মিঠু মণ্ডল (৫৫) ও কর্মী রঞ্জিত বিশ্বাস (৫৩)। আহত দু’জনকে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এক জনকে ছেড়ে দেওয়ায় হয়েছে। তনুশ্রী বিশ্বাস নামে বছর ষোলোর এক কিশোরী ভর্তি রয়েছে।

এ দিন দুপুরটা এমনিতে আর পাঁচটা ছুটির দুপুরের মতোই ছিল। গাংনাপুর থানার কাছেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে বাজি কারখানা। জনা পঁয়ত্রিশ কর্মী নিয়মিত কাজ করেন। দুপুরে তাঁরা সবে খেতে গিয়েছিলেন। আর মিনিট দশেক হল, কারখানায় এসে ঢুকেছিলেন মালিক মিঠু। কারখানাটি আগে চালাতেন তাঁর স্বামী। বছর তিনেক আগে তিনি মারা যান। তার পরে মিঠুই হাল ধরেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর কথায়, ‘‘এ দিন তুবড়ির মশলা তৈরি করা হচ্ছিল। আমিও সেখানে ছিলাম। দুপুরে বাড়িতে খেতে যাই। আর তার পরেই ওই বিস্ফোরণ। কোনও ভাবে নিশ্চয়ই বারুদে আগুন লেগেছিল।’’ আশপাশে প্রায় কিলোমিটার তিনেক দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। একটি টিনের চাল ছিটকে গাছের উপরে উঠে যায়। প্রথম দিকে অনেকেই বুঝতে পারেননি। খানিক বাদে দেখা যায়, বাজি কারখানার দিক থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উঠছে। আর সেই সঙ্গে বাজি ফাটার অবিরত শব্দ।

আগুন লেগেছে বুঝে কারখানার কর্মীর অনেকেই ছুটে আসেন। কিন্তু তখন কারওরই কিছু করার ছিল না। আঁচের তীব্রতায় কেউ কাছেও যেতে পারছিলেন না। যে পাকাবাড়িতে কারখানাটি ছিল, তার চারটি ঘর থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। পিছনে একটি নির্মীয়মাণ একতলা বাড়িও ভেঙে যায়। পাশে তিনটি টিনের ঘর ভেঙে প়ড়ে। আগুন কতটা ছড়াবে এলাকার লোকজন প্রথমে ঘর ছেড়ে দৌড়ে খানিকটা দূরে স্কুলের মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দমকল আসার পরে সকলেই ফিরে আসেন। কারখানার এক কর্মী বলেন, ‘‘আমি ছুটে এসে শুনি, বিস্ফোরণে মালিক নিজেই মারা গিয়েছেন।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার সময়ে আরও কিছু কর্মী আশপাশে ছিলেন। পরে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। মালিকের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

রানাঘাটের মহকুমাশাসক মণীশ বর্মা বলেন, “কী করে এই ঘটনা ঘটল, তার তদন্ত হচ্ছে।” জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই কারখানার বৈধ কাগজপত্র ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আগুন লাগার কারণ জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন