মেলায়। কুপিলায় সাফিউল্লা ইসলামের তোলা ছবি।
এক সময়ে এই মাঠে মহিলাদের পা রাখা মানা ছিল। নাটক করে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল গ্রামের যুবকদের। দিন বদলে গিয়েছে।
বছর কয়েক হল, গ্রামের যুবকদের হাত ধরেই ‘সম্মিলনী উৎসব’ শুরু হয়েছে ডোমকলের কুপিলা গ্রামে। গ্রামের সিনিয়ার মাদ্রাসা মাঠে তিন দিনের উৎসব। তার টানেই সব কাজ ফেলে লোক জড়ো হয়। বাইরে থেকে ঘরে ফেরেন বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়ে আর চাকুরেরা। এক সময়ে যাঁরা এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে এসেছেন, তাঁরাও শীতের দুপুর থেকে হাড়কাঁপা সন্ধ্যা পর্যম্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন মাঠে। আর মহিলাদের উপস্থিতি তো নজরে পড়ার মতো।
শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান। কনকনে ঠাণ্ডা সত্ত্বেও ভোরে ম্যারাথন ও পথ পরিক্রমাদিয়ে সূচনা। প্রায় ১০ কিমি ম্যারাথন। কয়েক হাজার ক্রীড়াপ্রেমী বিকেলে জড়ো হয়েছিলেন মাঠের চারপাশে। টায়ার দৌড় থেকে সরু পাইপে হাঁটা, কত রকমের যে ইভেন্ট! সেই সঙ্গে নাটক, স্বরচিত কবিতাপাঠও ছিল।
জলঙ্গির খয়রামারি গ্রাম থেকে বাপেরবাড়িতে ফিরেছেন সামসুন্নাহার বিবি। স্বামী ছেলেদেরও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বছরের এই দিন ক’টার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। নানা রকম খেলা ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে কাটে তিনটে দিন। সবচেয়ে বড় পাওনা বহু পুরানো বন্ধু আর আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হওয়া। দাদা, দিদি, ভাইবোনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ারও একটা বড় সুযোগ হয় এই তিনটি দিনে।’’
কেবল বিবাহিতা মেয়েরাই নন। গ্রামের অনেক যুবকও কাজকম্ম রেখে ফিরেছেন গ্রামে। কলকাতায় একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘কাজের চাপ আছে, ছুটি পাওয়া খুব সমস্যার। কিন্তু এই তিন দিন ছুটির জন্য প্রতি বছরই অনেক আগে থেকে আবেদন করে রাখি। এই অনুষ্ঠান এখন আক্ষরিক অর্থেই সম্মিলনী কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
বয়স সত্তর পেরিয়েছে প্রাক্তন শিক্ষক আব্দুল জলিল বিশ্বাসের। তিনিও ফিরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক সময়ে গোষ্ঠী বা পাড়ার বিভাজন প্রকট হয়ে উঠেছিল এই গ্রামে। এই অনুষ্ঠানের দৌলতে সে সব ঘুচেছে। শেষ বয়সে এসে এই মিলমিশ দেখার সুযোগ আর হারাতে চাই না। যত দিন বেঁচে থাকব, এই তিন দিন গ্রামে ফিরবই ফিরব।’’
ক্লাব কর্তাদের দাবি, একটা সময় বিরোধিতা থাকলেও এখন সকলের চাহিদার চাপে তাঁদের তিন দিন ধরে অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে। সম্মিলনী সঙ্ঘের ছেলেদের লেখা নাটক ‘অচল টাকা অচল দেশ’ মঞ্চস্থ হবে রবিবার। আছে নির্মল বাংলা গড়তে নাটক ও পথনাটিকা ‘সবর্নাশা নেশা’, ‘পিতা মাতার অধিকার’।
এ ছাড়া ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট। ক্লাবের সম্পাদক ইকবাল হোসেনের কথায়, ‘‘প্রত্যন্ত এই গ্রামে তিন দিন ধরে অনুষ্ঠানের খরচ নিয়ে গিয়ে আমরা প্রতি বছরই মুশকিলে পড়ি। কিন্তু মানুষের উৎসাহেই সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে এগোই। বছরে এই একটা সময়েই যে সকলের সঙ্গে সকলের দেখা, গল্প, মেলামেশা হয়!’’