Road accident

দুর্ঘটনায় একই পরিবারের মৃত ৩

দু’লেন থেকে চার লেন হয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানের গতিও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

আহিরণ শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৩
Share:

যে গাড়ির ধাক্কায় উল্টে যায় লছিমন, মারা যান তার তিন জন যাত্রী। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

রেজিনগরে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু শোক কাটতে না কাটতেই এক সপ্তাহের মধ্যে ফের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার বলি হলেন একই পরিবারের তিন জন। প্রচণ্ড গতিতে চলা দুটি ছোট গাড়ির মধ্যে রেষারেষির মধ্যে পড়ে যায় লছিমনটি। তখন একটি গাড়ি পিছন থেকে ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে আটক করলেও অন্য গাড়িটি দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়। মৃতদের নাম কুরবান শেখ (২১), তাঁর মা সুলেখা বিবি (৪০) ও দিদিমা মালেকা বেওয়া (৫৪)। মৃত কুরবানের বাবা বজলে আহমেদ আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। কুরবানদের বাড়ি সুতির ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বৈষ্ণবডাঙা গ্রামে। মালেকার বাড়ি সুতিরই আমুহা গ্রামে। তিনি সোমবার সকালেই বৈষ্ণবডাঙায় মেয়ের বাড়িতে আসেন। তাকে নিয়েই এ দিন মেয়ে, জামাই ও নাতি নিজেদেরই লছিমনে করে ধুলিয়ানে যাচ্ছিলেন এক চিকিৎসকের কাছে।

Advertisement

দুর্ঘটনার পরেই ছুটে আসেন লোকজন। গাড়ির সামনের দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অংশের মধ্যে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান এক মহিলা। অন্য এক মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। লছিমনের চালক কুরবান ও তাঁর বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগেই মৃত্যু হয় কুরবানের। বাবা হাসপাতালে ভর্তি হলেও তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দু’লেন থেকে চার লেন হয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানের গতিও। বেড়েছে আগে যাওয়ার রেষারেষিও। জাতীয় সড়কের উপর অটো, টোটো ও লছিমন যাওয়া বহু বার নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। কিন্তু ঘোষণাই সার। অবাধে জাতীয় সড়ক পথে চলছে সেই সব যান। কোথাও কোনও তাদের নিয়ন্ত্রণের বালাই নেই।

Advertisement

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার ডিএসপি ট্র্যাফিক সুকান্ত হাজরা এই মুহূর্তে নদিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ ডিউটিতে রয়েছেন। তিনি বলেন, “জাতীয় সড়কে কোনও ছোট গাড়ি চলার কথাই নয়। মোটর বাইক চলার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট পথ রয়েছে। পুলিশের যা সংখ্যা তাতে সব সময় নজরদারি সম্ভব হয় না। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের এই অংশের রাস্তা ভাল বলে বড় গাড়িগুলির মধ্যেও রেষারেষি রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে তাই সকলেরই সচেতন হওয়া দরকার। তবে দেখা হচ্ছে দুর্ঘটনা এড়াতে আরও কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”

দুর্ঘটনার পর গোটা গ্রাম যেন মুড়ে গিয়েছে শোকের ছায়ায়। লছিমন চালক কুরবান শেখই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। ৭ ভাই বোনের মধ্যে দু’জন ৮ বছরের সুলেমান ও ৭ বছরের জুলেমান মূক ও বধির বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। কুরবানের এক ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুতে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে স্ত্রী রেহেনা বিবির। বলছেন, “স্বামী লাদেন (লছিমনের স্থানীয় নাম) চালিয়ে যা আয় করতেন তা থেকেই চলত সংসার, মেয়ের চিকিৎসা। বছর ৬৫ বয়স শ্বশুরের। দিনমজুরিও ঠিক মত করতে পারেন না। কী করে চলবে সংসার এখনও কিছুই জানি না। বিড়িও বাঁধতেও জানি না যে সংসারটা টানব।” কান্নায় বার বার ভেঙে পড়ে নিজের কপাল চাপড়াচ্ছেন রেহেনা। সান্ত্বনার হাত বাড়িয়ে কান্না থামাবার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশি মহিলারা।

আহত বজলে বলছেন, “বহু দিন ধরেই লছিমনে যাতায়াত করি। এদিনও তাড়াতাড়ি ফিরে আসব বলেই বাড়ি থেকে সওয়া ৯টা নাগাদ রওনা দিয়েছিলাম। লছিমনের পিছনে বসেছিল শাশুড়ি আর স্ত্রী। ভ্যানের এক পাশে আমি। ছেলে কুরবান চালাচ্ছিল। পিছনে গাড়ি আসছে দেখতে পাচ্ছি। গাড়িদুটি কখনও পাশাপাশি , কখনও আগে পরে। কিন্তু সেই গাড়ি যে ধাক্কা মারবে স্বপ্নেও ভাবিনি। ওই ধাক্কায় আমার সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন