নিশানায় নেতা

চা দোকানে ঢুকে কোপ

হঠাই পিছন থেকে চুলের মুঠি ধরে তাঁর পিঠে কোপ মারে আততায়ী।  ঠেকাতে গেলে ডান হাতে চোট লাগে। মাথায়, ঘাড়ে, মাজায় পড়তে থাকে একের পর এক কোপ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সরোজকুমার ঘোষ। শেষে তাঁর শিরদাঁড়ায় কোপানো হয়। তার পর বোমাবাজি করে দুষ্কৃীতারা চলে‌ যায়।   

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

চাকদহ শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২২
Share:

সরোজকুমার ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

রোজকার মতোই রাতে পরিচিত এক জনের সঙ্গে দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন তিনি।

Advertisement

দাপুটে কংগ্রেস নেতা, বয়স মোটে বছর বিয়াল্লিশ। লম্বা দর্শনীয় চেহারা।

হঠাই পিছন থেকে চুলের মুঠি ধরে তাঁর পিঠে কোপ মারে আততায়ী। ঠেকাতে গেলে ডান হাতে চোট লাগে। মাথায়, ঘাড়ে, মাজায় পড়তে থাকে একের পর এক কোপ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সরোজকুমার ঘোষ। শেষে তাঁর শিরদাঁড়ায় কোপানো হয়। তার পর বোমাবাজি করে দুষ্কৃীতারা চলে‌ যায়।

Advertisement

কয়েক মিনিটের ‘অপারেশন’। ১৯৮১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, শনিবার। দেখতে দেখতে ৩৮টা বছর পার হয়ে গিয়েছে। আমজনতার স্মৃতি থেকে প্রায় মুছে গিয়েছে সেই দুঃস্বপ্ন।

সরোজ রাজনীতিতে এসেছিলেন অল্প বয়সেই। অল্প সময়ে উপরে ওঠেন। জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ছিল তাঁর সরাসরি যোগাযোগ। তখন সবে বামেরা রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। তবুও কেউ সমস্যায় পড়লে সরোজের কাছে আসত। তাঁর এই জনপ্রিয়তাই বুঝি কাল হয়েছিল।

পূর্ব রেলের রানাঘাট-গেদে শাখার আড়ংঘাটা স্টেশনে ঢোকার মুখে আপ প্লাটফর্মের ধারে কেবিন ঘর। স্টেশনে তখন গুটি কয়েক আলো জ্বলত টিমটিম করে। দোকান-টোকান বিশেষ হয়নি। সরোজের চেষ্টাতেই পূর্ব দিকে রেলগেটের কাছে বাজার বসেছিল। কেবিনের পিছনেই ছিল নিত্য দত্তের চায়ের দোকান। রেলগেটের পাশের সরু গলি দিয়ে দোকানে যেতে হত। রোজ সন্ধ্যায় সেখানেই চা খেতে আসতেন সরোজ। সে দিনও এসে বসেছিলেন। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ জনা পাঁচেক পেশাদার খুনি হানা দেয়। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে, যদিও তা প্রমাণ হয়নি।

ওই বাজার থেকে খানিক দূরে পূর্ব আড়ংঘাটা শবদলপুরে রাস্তার ধারে সরোজদের বাড়ি। বছর পাঁচেক আগে তাঁর স্ত্রী রানুবালা ঘোষ মারা গিয়েছেন। দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছেন। ছেলে অসীম তখন নবম শ্রেণিতে পড়ত। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা তখন জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু কে বাবাকে খুন করল, কোথা থেকে তারা এসেছিল, কিছুই জানতে পারিনি।’’

প্রথমে তাঁরা খুনের খবর পাননি। শুধু হামলার কথা শুনেছিলেন। অসীম বলেন, ‘‘আমরা যেতে চাইলে দলেরই এক নেতা বলেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাবাকে। পরের দিন সকালে গিয়ে দেখা করলে ভাল হবে। আমরা তখন ছোট। কিছুই বুঝি না। কার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাব? পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। কিন্তু কাউকেই ধরতে পারেনি।’’

সরোজের খুব কাছের লোক বলে পরিচিত, বছর ৭৪ বয়েসের মনোজ মোহন চক্রবর্তী বলেন, “আমার থেকে কয়েক বছরের বড় ছিলেন সরোজদা। দলের হয়ে কাজ করতে গিয়েই তাঁকে তাঁকে খুন হতে হয়। সেই শূ্ন্যস্থান আর পূর্ণ হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন