West Bengal SIR Hearing

স্কুলে নথি খুঁজে এসে শুনানিতে কালীতারা

তবে কালীতারা জানান, সবচেয়ে অসহায় বোধ করলেন সে দিন, যে দিন বাড়িতে নোটিস দিয়ে বলা হল ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০৮
Share:

দিন তিনেক আগে ঝুঁকে পড়া শরীর নিয়ে ধুবুলিয়ার রাধারানি গার্লস হাই স্কুলে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন উনআশি বছরের কালীতারা সামন্ত। স্কুল বন্ধ ছিল। হাঁটতে-হাঁটতে বৃদ্ধা যান পাশের ধুবুলিয়া শ্যামাপ্রসাদ শিক্ষানিকেতনে। স্কুলের শংসাপত্র চাই! এসআইআর-শুনানিতেডাক পড়েছে।

বাবা-মায়ের হাত ধরে ১৯৫৬ সালে ও-পার বাংলা থেকে এসেছিলেন উদ্বাস্তু পরিবারের মেয়ে কালীতারা। ধুবুলিয়ার তাতলায় উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় পান। দু’মুঠো খাবার জোগাড় করাই তখন কঠিন, কিন্তু পড়াশোনার খিদে ছিল। ধুবুলিয়ার নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু ১৯৬৪ সালে টেস্টে অকৃতকার্য হওয়ায় ম্যাট্রিক পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। হাতের কাজ শিখতে ভর্তি হন ফুলিয়া পলিকেটনিক কলেজে। ১৯৬৬ সালে সেখান থেকে পাশ করেও কিন্তু চাকরি পেলেন না। কল্যাণীর এক উদ্বাস্তু পরিবারে বিয়ে। ছেলে অলোকের জন্মের এক বছর পরে স্বামী মারা গেলেন। ফের শুরু জীবনযুদ্ধ।

তবে কালীতারা জানান, সবচেয়ে অসহায় বোধ করলেন সে দিন, যে দিন বাড়িতে নোটিস দিয়ে বলা হল ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। শুনানিতে গিয়ে নথি জমা করতে হবে। কোথায় পাবেন নথি? তখনই মনে পড়ে স্কুলের কথা। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ শিক্ষানিকেতনের প্রধান শিক্ষক নুর মহম্মদ খান পুরনো নথি ঘেঁটে কিছু পাননি। ওই স্কুলের শিক্ষক দীপকুমার রায় বলেন, “১৯৫৬ সালে আমাদের স্কুলে সকালে বালিকা বিদ্যালয়ের ক্লাস হত। ফলে, যা কিছু নথি ওঁদের কাছেই ছিল।” পরে তিনিই বৃদ্ধার সঙ্গে তাঁর বাড়িতে গিয়ে নানা জীর্ণ কাগজ ঘেঁটে একটা ফটোকপি করা ছেঁড়া কাগজ পান, ফুলিয়া পলিটেকনিক থেকে পাশের শংসাপত্র। দীপ বলেন, “ওঁরা হয়তো জানতেনই না যে এই কাগজটা বাড়িতে আছে!”

মঙ্গলবার সে নথি হাতেই ধুবুলিয়ায় কৃষ্ণনগর ২ ব্লক অফিসে শুনানিতে হাজিরা দেন কালীতারা। ২০০১ সালে তাঁরা তাতলার বাড়ি ছেড়ে ধুবুলিয়ার ২১ নম্বর বুথ এলাকায় যান। ২০০২ সালে সেই বুথের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি, আবার তাতলার ভোটার তালিকা থেকেও নাম কাটা যায়। সেই এক বারই কালীতারা ভোট দিতে পারেননি। সমস্যা তাতেই।

কালীতারার সঙ্গে ব্লক অফিসে আসা তাঁর বৌমা চম্পা বলেন, “মা ভোর ৫টায় উঠে শুনানিতে আসার জন্য তৈরি হয়েছেন।” কথা কানে যেতে কালীতারা মুখ ফিরিয়ে বলেন, “সারা জীবন ভগবান কষ্ট দিয়েছে। আর শেষ বয়সে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন!” শুনানির ডাক আসে। তার আগে বিএলও ফর্মে আঙুলের টিপছাপ দেওয়ার কথা বলতেই ফুঁসে ওঠেন বৃদ্ধা— “এত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছি টিপছাপ দেওয়ার জন্য?” কাঁপা হাতে গোটা-গোটা ইংরেজি অক্ষরে লেখেন— কালীতারা সামন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন