coronavirus

বন্ধ করা হল হাসপাতাল

এর পর আর ঝুঁকি নিতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মনোরমা হাসপাতাল।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৪:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি

গত এক সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্য দফতরের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল রানাঘাটের বেসরকারি মনোরমা হসপিটেক্স।

Advertisement

এই হাসপাতালে তিন দিন ডিউটি করে ফিরে যাওয়ার পর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল মারা গিয়েছিলেন এক চিকিৎসক। তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ ছিল। তার পরেই ডায়ালিসিস করাতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন এক জন। তাঁরও লালারসের রিপোর্ট পজিটিভ এসছিল। গত ন’দিনে এই হাসপাতালে তিন জন কর্মী ও আরও তিন রোগীর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ওই কর্মীদের মধ্যে এক জন এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও এক নার্স রয়েছেন।

এর পর আর ঝুঁকি নিতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মনোরমা হাসপাতাল। বুধবার কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়ে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক। যতদিন না ওই হাসপাতালের সমস্ত কর্মীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে তত দিন বন্ধ থাকবে হাসপাতাল। তবে রোগীদের কথা ভেবে খোলা থাকছে শুধু ডায়ালিসিস বিভাগ। যে সব কর্মীর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে শুধু তাঁদের দিয়েই চালাতে হবে ডায়ালিসিস বিভাগ। ডায়ালিসিসের জন্য প্রচুর মানুষ নির্ভরশীল এই হাসপাতালের উপরে। কৃষ্ণনগরের জেলা হাসপাতাল ও কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতাল ছাড়া নদিয়ায় একমাত্র এই হাসপাতালেই ডায়ালিসিস হয়। দিনে প্রায় ৭০ জন রোগী এখানে ডায়ালিসিস পরিষেবা নেন। এখানকার এক চিকিৎসকের করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কথা গোপন করা এবং আক্রান্তদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দিন কয়েক আগে ওই হাসপাতালকে শো-কজ করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তখন স্বীকার করেছিল, তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট বানাতে গিয়ে কিছু ফোন নম্বরে ভুল হয়েছিল। দ্রুত আক্রান্তদের নতুন রিপোর্ট তৈরি করে স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হচ্ছে বলেও তাঁরা জানিয়েছিলেন।

Advertisement

এরই মধ্যে মঙ্গলবার এই হাসপাতাল থেকে ডায়ালিসিস করিয়ে যাওয়া শান্তিপুর ব্লকের বাসিন্দা এক মহিলার রিপোর্ট ও হাসপাতালেরই এক কর্মীর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাতে উদ্বিগ্ন হয় স্বাস্থ্য দফতর। দ্রুত মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক। সেখানেই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কথায়, “যে ভাবে একের পর এক আক্রান্ত বেড়ে চলেছে তাতে হাসপাতাল আপাতত বন্ধ করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ খোলা ছিল না। এর পর গোষ্ঠী সংক্রমণ সামলানো যাবে না।”

রানাঘাট মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “গত ন’দিনে ছয় জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে ওই হাসপাতালে। শুধু কর্মীরাই নয়, হাসপাতাল থেকে পরিষেবা নিয়ে ফিরে যাওয়ার পর একাধিক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে।” তিনি বলেন, “যে সমস্ত কর্মীর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে শুধু তাঁদের দিয়ে ডায়ালিসিস ইউনিট চালু রাখার কথা বলা হয়েছে। ডায়ালিসিস ইউনিটের সঙ্গে সম্পর্কিত ল্যাবরেটরি খোলা রাখা হবে। সেখানেও যে কর্মীদের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে শুধু তাঁদের কাজে লাগানো হবে।’’ আগামী অন্তত সাত ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, আউটডোর ও অন্য ল্যাবরেটরি পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

ওই বেসরকারি হাসপাতালের প্রশ্ন ছিল, তাদের হাসপাতালে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার ভর্তি ছিলেন ১২ জন। এঁদের মধ্যে ভেন্টিলেটরে আছেন ৪ জন। কী হবে তাদের? মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “চাইলে ওই রোগীদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সিদ্ধান্তের ফলে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সাড়ে চারশো কর্মীর চাকরি সঙ্কটে পড়ে গেল। হাসপাতালের ডায়গনস্টিক ম্যানাজার অনির্বাণ ঘোষ বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, সমস্ত কর্মীদের পরীক্ষা করিয়ে নেব। এখনও সেটা বলছি। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্মীদের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু প্রশাসনের।” রানাঘাট মহকুমা শাসক হরসিমরণ সিংহ বলেন, “ওই হাসপাতাল থেকে যাতে কোনও ভাবে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে তার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন