Kalyani

কারখানার কাজে খোঁজ ভাল থাকার

সামনে দুর্গাপুজো। তবে পুজো তাঁর কাছে আলাদা করে কোনও আনন্দ আনে না। আর পাঁচটা দিনের মতোই পুজোর ক’টা দিন কাটে সাধারণ ভাবে। চার দিনের কারখানার ছুটিতে আদতে ছুটি মেলে না।

Advertisement

অমিত মণ্ডল

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০০
Share:

কারখানায় অনিমা দাস। কল্যাণীতে। ছবি: অমিত মণ্ডল।

প্লাস্টিকের কারখানা। যন্ত্রের অনবরত শব্দ। ভ্যাপসানো গরম। তার মধ্যে মাথায় গামছা জড়িয়ে অ্যাগলো মিটার যন্ত্রে একমনে প্লাস্টিক ঢেলে যাচ্ছেন মানুষটি। কোনও বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই সে কাজে। সারা বছর ধরে তাঁর এই একঘেয়েমির কাজ। তবুও এই কাজ করা নিয়ে আপসোস নেই মেয়েটির। গয়েশপুর পুরসভা বেদিভবন এলাকার বাসিন্দা মধ্যবয়স্ক, ভাঙা চেহারার অণিমা দাস। এই কাজই জীবনের কঠিন সংগ্রামের সময়ে তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। তাই এই কাজ করা নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই তাঁর।

Advertisement

সামনে দুর্গাপুজো। তবে পুজো তাঁর কাছে আলাদা করে কোনও আনন্দ আনে না। আর পাঁচটা দিনের মতোই পুজোর ক’টা দিন কাটে সাধারণ ভাবে। চার দিনের কারখানার ছুটিতে আদতে ছুটি মেলে না। বাড়ির, সংসারের কাজ সামলাতে সামলাতে গোটা দিন চলে যায়। ঘেমেনেয়ে শেষ হয়ে যায় পুজোর ছুটি, অবসর।

অণিমার স্বামীও প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। সে আয়েই দুই ছেলে নিয়ে সংসার টেনেটুনে চলত। ২০০৯ সালে স্ট্রোকে স্বামীর মৃত্যু ঘটে। ছোট ছোট সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন অণিমা। কী ভাবে, কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। শেষে সংসারের হাল ধরতে, ছেলেদের মানুষ করতে স্বামীর কাজই বেছে নেন। কল্যাণী শিল্পাঞ্চল এলাকায় এক প্লাস্টিকের কারখানায় প্রথমে প্লাস্টিক বাছাইয়ের কাজ নেন। বছরের পর বছর চলতে থাকে লড়াই। ধীরে ধীরে সে কাজে দক্ষতা বাড়তে থাকে অণিমার। এর কয়েক বছর পর তিনি শ্রমিক থেকে হয়ে ওঠেন মিস্ত্রি। এখন অণিমা কল্যাণী শিল্পাঞ্চল এলাকায় একটি প্লাস্টিক রিসাইকেলিং কারখানায় অ্যাগলো মিটার যন্ত্র চালানোর দক্ষ কারিগর।

Advertisement

কবে একসঙ্গে পরিবার নিয়ে মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে গিয়েছিলেন, মনে করতে পারেন না। সারল্যমাখা বিষাদ-মুখে হেসে ওঠেন, ‘‘ছেলেরা ছোট থাকতে ঠাকুর দেখতে যেতাম।’’

গত কয়েক বছর ধরে পুজোর ছুটি বাড়ির কাজ করেই কেটে যায়। কখনও মনে হলে বাড়ির কাছে কোনও মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন। দীর্ঘ দিন ধরে অ্যাগলো মিটার যন্ত্রে প্লাস্টিক দিতে দিতে একঘেয়েমিই এখন তাঁর প্রতি দিনের অভ্যাস। তাই আনন্দ নিয়েও বিশেষ ভাবিত নন অণিমা। তাঁর কাছে কোনওমতে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকা, দুই ছেলের সংসার সচল রাখাই ভাবনার বিষয়। কারখানার যন্ত্র থেকে জীবনের পাত্র। অণিমার দুই হাত সচল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন