নওদার চাঁদপুরে সালিশির ঘটনায় মূল অভিযুক্তেরা অধরাই থেকে গেল শনিবার।
বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার অভিযোগে ওই গ্রামের মাতব্বরেরা এক তরুনীকে প্রথমে জরিমানা করে। তা দিতে না পারায় ফতোয়া জারি হয় — বেতের কঞ্চি দিয়ে ১০৮ ঘা মারার। ওই শাস্তির পরে এ দিনও নিজের গ্রাম চাঁদপুরে লোকলজ্জায় ফিরতে পারেননি তরুণী।
তাঁর স্বামী বলেন, ‘‘স্ত্রীর যে দিন ইচ্ছা সে দিন ফিরবে। তত দিন ছেলেমেয়েদের আমিই দেখাশোনা করব।’’ তবে ওই ঘটনায় মহিলার সঙ্গে নাম জড়িয়ে ছিল যার, সেই ঝড়ু শেখের কাছে নদিয়ার কাঞ্চনতলা গ্রামে গিয়েও দেখা মেলেনি। ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে অকথ্য গালমন্দ করে ফোন নামিয়ে রাখে সে। ফের ফোন করলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয় ঝড়ু।
তবে, ওই তরুণীর চোখের সামনে রবিবারের ছবি আজও স্পষ্ট। প্রায় ৬০ জন লোক দাঁড়িয়ে তার ‘পাপে’র বিচার করার নামে মধ্য যুগীয় ব্যবস্থা চালু করেছিল। তার কথায়, ‘‘তিন ছেলে মেয়ের সংসার। সংসারে দারিদ্র ছিল চরমে। কিন্তু ছেলে মেয়েদের পড়াশুনো ঠিক মতো হয়নি। বাড়িতে কোন আনন্দ নেই। তাই ভেবেছিলাম মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করবো। তাতেও বাধ সাধলো ওর(ঝরু শেখের) পরিবার। ফলে বন্ধ হলো বিয়ে। আমার দু’দিক বন্ধ হয়ে গেল।’’
নওদার সংসারে ফেরা সমস্যা। আবার না ফিরলেও ছেলেমেয়েগুলোর মুখ ভাসছে। ফিরলেও আগের মতো কেউ আর বিশ্বাস করবে না। সমাজে সকলে অবিশ্বাস করবে। তার উপর এই সাজা— তরুণী বলছেন, ‘‘আমার সব গেল গো!’’ ঝরুর কথা বিশ্বাস করে বাড়ি থেকে পালানোও যে তাঁর ঠিক হয় নি, মানছেন। বলছেন, ‘‘ঝরু যে বিয়ে করতে পরবে না, তা বুঝতে পারিনি। না হলে কী পালায়?’’ অতীতে এমন সালিশির ঘটনায় কি ভূমিকা নিয়েছিল পুলিশ? সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তাদের মতে পুলিশ ঠিক মতো অভিযোগ পেলে বা অপরাধের কথা জানতে পারলে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। উদাহরণ, বেলডাঙা থানার মাধুরপুকুর গ্রামের দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছে। এক সদ্য তরুনীর স্বামী মারা যাওয়ার পর অন্য এক জনের সঙ্গে কথা বলতে দেখে গ্রামের লোকেরা সালিশি বসায়। সেখানে গ্রামের মোড়লদের রায় ছিল— তরুণী বয়সে তার গ্রামে ঢোকা যাবে না।