ছবি: সংগৃহীত
শীত তেমন জাঁকিয়ে না পড়লেও হেমন্তের শুরুতে তার হাতছানি বেশ প্রবল। এরই মধ্যে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে নবাবের শহর লালবাগে। কিন্তু, মরসুম শুরুর মুখেই এখানকার হোটেলের একটি ঘরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য খুনের ঘটনায় পর্যটন শিল্প কিছুটা হলেও মার খাবে বলে আশঙ্কা হোটেল ব্যবসায়ীদের।
এর আগে লালবাগের একটি হোটেলে রাজ্য এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কয়েক জন তরুণীকে জোর করে আটকে রেখে তাদের দিয়ে অসামাজিক কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে বিষয়টি জানাজানি হতেই পুলিশ লালবাগের পাহাড়বাগান এলাকার ওই হোটেলে হানা দিয়ে বেশ কয়েক জন তরুণীকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারকে।
গত বছর ভরা পর্যটন মরসুমের মুখে স্থানীয় এক দুষ্কৃতী মদ্যপ অবস্থায় পিস্তল হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে প্রকাশ্য রাস্তায় আতঙ্ক তৈরি করেছিলেন। তাতে পর্যটকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু তার পরেও মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশের যে হুঁশ ফেরেনি, তার তার বড় প্রমাণ হোটেলের ঘরে খুন। এবং সেই ঘরে ওই তৃণমূল নেতার দেহ দু’দিন পড়ে থাকা। বিভিন্ন সময়ে লালবাগের হোটেলগুলির বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজকর্ম চালানোর যে অভিযোগ, তাতে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজসের অভিযোগ তুলেছেন পুর-নাগরিকরা। অভিযোগ, বিভিন্ন হোটেলে বেআইনি মদের কারবার থেকে বহিরাগত মহিলাদের নিয়ে এসে অসামাজিক কাজ হয়ে থাকে। বিশেষ করে লালবাগকোর্ট স্টেশন লাগোয়া এবং হাজারদুয়ারি সংলগ্ন বেশ কিছু হোটেলে রমরমিয়ে দেহব্যবসা চলে। পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার বলেই দিন দিন বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ।
মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধান বিপ্লব চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদে থাকা এক শ্রেণির কর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েইছে। এর পিছনে কোনও গোপন বোঝাপড়া থাকতে পারে। তাই সব জেনেও পুলিশ নির্বিকার। আর সেই সুযোগে হোটেলগুলিতে বাড়ছে বিভিন্ন অসামাজিক কারবার।’’
মুর্শিদাবাদ সিটি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য জানান, প্রতি বছর পর্যটন মরসুমে ১০-১২ লক্ষ পর্যটকের ভিড় হয়। অধিকাংশ সদলবলে বেড়াতে আসেন। এখন ওই ঘটনার জেরে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিলে জেলার পর্যটন শিল্প মার খাবে। ছোট-বড় সব ধরণের ব্যবসায়ীদের রুজিতে টান পড়বে।
শীতে মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি নদিয়ার মায়াপুর, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর-সহ বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকের ঢল নামে। নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের বিভিন্ন হোটেলের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু ছোট হোটেলে রমরমিয়ে চলে বেআইনি নানা কারবার। তার ফলে বেড়াতে এসে বিপদে পড়েছেন বা হেনস্থা হয়েছেন এমন পর্যটকের সংখ্যা বড় কম নয়। অভিযোগ জানিয়ে এখানেও বিশেষ লাভ হয়নি। অভিযোগ, এখানে কারা ঘর ভাড়া নিচ্ছেন, তাঁদের কোনও প্রমাণপত্র হোটেলে থাকে না। অর্থাৎ প্রমাণপত্র ছাড়াই এখানে ঘর ভাড়া মেলে বলে অভিযোগ।
গত বছর মুর্শিদাবাদ বেড়াতে এসে সপরিবারের লালবাগের একটি হোটেলে এসে ওঠেন কলকাতার গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা রাজর্ষি চক্রবর্তী। তিনি জানান, হোটেলে অসামাজিক কাবার চলছে বুঝতে পেরে এক রাত কাটিয়েই লালবাগের হোটেল ছেড়ে বহরমপুরের হোটেলে গিয়ে উঠি।
যাবতীয় অসামাজিক কাজ বন্ধ করতে পুলিশকে কড়া হতে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। লালবাগের মহকুমাশাসক তোপডেন লামাও গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন।