ত্রাণ না পেয়ে ক্ষুব্ধ গড্ডা

গ্রামে বান এসেছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তো আর বানের জলে ভেসে আসেননি! টানা ন’দিন ধরে জলবন্দি থাকার পরে কারও কোনও সাহায্য না পেয়ে এ ভাবেই ক্ষোভে ফুঁসছে ভরতপুর ১ ব্লকের গড্ডা গ্রাম। ওই গ্রামের পাঁচশো পরিবার জলবন্দি রয়েছে। ত্রাণ শিবির তো দূরের কথা একটি বারের জন্য কেউ খোঁজটুকু নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪১
Share:

গ্রামে বান এসেছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তো আর বানের জলে ভেসে আসেননি!

Advertisement

টানা ন’দিন ধরে জলবন্দি থাকার পরে কারও কোনও সাহায্য না পেয়ে এ ভাবেই ক্ষোভে ফুঁসছে ভরতপুর ১ ব্লকের গড্ডা গ্রাম। ওই গ্রামের পাঁচশো পরিবার জলবন্দি রয়েছে। ত্রাণ শিবির তো দূরের কথা একটি বারের জন্য কেউ খোঁজটুকু নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। সোমবার কান্দিতে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ আসছেন শুনে ভরতপুর ১ ব্লকের গড্ডা গ্রামের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘ওঁরা না এসে আমাদের জন্য ত্রাণ পাঠালে অনেক বেশি ভাল হত।’’

কুঁয়ে নদীর একেবারে পাশের গ্রাম গড্ডা। হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়কের বৈদ্যনাথপুর মোড় থেকে যে গ্রামের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। এ দিন ওই সড়ক দিয়েই এলেও ওই দুই মন্ত্রী কিন্তু গড্ডা গ্রামে যাননি। একদিকে নাগাড়ে বৃষ্টি, অন্যদিকে কুঁয়ে ছাপিয়ে জল ঢুকেছে গ্রামে। যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছ‌ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। দারিদ্র তাঁদের নিত্যসঙ্গী। এই অবস্থায় খেতেও কোনও কাজ নেই। অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছে গড্ডার বহু বাসিন্দা।

Advertisement

নামু গড্ডা এলাকায় বাড়ি সত্তর ছুঁইছুঁই সন্ধ্যা হাজরার। মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের ভিতরে এক কোমর জল। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে দেওয়াল। ঝুঁকি না নিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। সন্ধ্যাদেবী বলছিলেন, ‘‘বান এসেছে ঠিকই। কিন্তু আমরা তো বাপু বানের জলে ভেসে আসিনি। সরকারের কোনও লোক এখনও পর্যন্ত গাঁয়ে এল না। নেতা-মন্ত্রীরাও এলেও দূর দিয়ে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। আমরা কোথায় যাব?’’

ওই পাড়ারই বৃদ্ধ পাঁচু মাঝি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। বেশিরভাগ সময় বিছানাতেই শুয়ে থাকেন। উঠোনে এক কোমর জল। ঘরের দাওয়াটা বেশ কিছুটা উঁচু বলেই এখনও পর্যন্ত ভিতরে জল ঢোকেনি। আকাশে মেঘ দেখলেই ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। ভয় একটাই—এই বুঝি চৌকাঠ ছাপিয়ে জল উঠে এল ভিতরে! ‘‘সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে আমরা দুই বুড়োবুড়ি। চাল, ডাল, আনাজ যা ছিল তা সবই শেষ। কী ভাবে যে এখন চলবে বুঝতে পারছি না।’’ বলছিলেন পাঁচুবাবুর স্ত্রী সাবিত্রীদেবী।

গড্ডা়র মতো একই অবস্থা গড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামপুর, চাঁচোয়া, সিঙ্গেরি গ্রামেরও। সেখানেও জলবন্দি রয়েছেন অন্তত আটশোরও বেশি পরিবার। অথচ ওই পঞ্চায়েতেরই অন্যান্য এলাকায় ত্রাণ শিবির রয়েছে মোট ৬টি। তাহলে এই গ্রামগুলো বাদ পড়ল কেন? গড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আরএসপি-র ভুলি বেগম মোল্লাও রীতিমতো বিরক্ত, ‘‘সে কথা জেলা প্রশাসনকেই জিজ্ঞাসা করুন। আমাদের কথায় তো কেউ কান দিচ্ছে না।’’ প্রধানের ক্ষোভ, গোটা পঞ্চায়েতের জন্য ত্রাণ এসেছে সাকুল্যে ১৭ কুইন্টাল। ত্রিপল এসেছে ৩২০টি। ১২ কুইন্টাল চিড়ে বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু রাস্তার কারণে সেই চিড়ে আনা সম্ভব হয়নি। ১২টি গ্রামের জন্য এই ত্রাণ কি যথেষ্ট? গড্ডা-সহ ওই চারটি গ্রামের কথাও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করেননি।

কান্দির মহকুমাশাসক বিজিন কৃষ্ণ অবশ্য বলছেন, ‘‘এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। কেন ওই গ্রামে ত্রাণ শিবির হয়নি তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। ত্রাণের কোনও অভাব নেই। আমরা দ্রুত ওই এলাকায় ত্রাণের ব্যবস্থা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন