কল্যাণী এইমসে শ্রমিক-মৃত্যু, নেই নিরাপত্তা, ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা

রাজ্যের দেওয়া জমিতে কেন্দ্রের টাকায় ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ বা এইমস নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে কল্যাণীতে। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় একে অন্যতম ‘মাইলস্টোন’-ও মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

মনিরুল শেখ

কল্যাণী শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

রাজ্যের দেওয়া জমিতে কেন্দ্রের টাকায় ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ বা এইমস নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে কল্যাণীতে। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় একে অন্যতম ‘মাইলস্টোন’-ও মনে করা হচ্ছে। সেই নির্মীয়মাণ এইমস-ভবনে কর্মরত অবস্থায় উপর থেকে পড়ে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় শ্রমিক-নিরাপত্তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

Advertisement

কয়েকশো কোটি টাকার এই প্রকল্পে দরপত্রের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের সিংহভাগই বরাত পেয়েছে হায়দরাবাদের একটি সংস্থা কেএমভি। সেখানে কয়েক শো শ্রমিক কাজ করেন। অভিযোগ, বুধবার কাজ করার সময়ে উপর থেকে পড়ে সালতাব নামে এক শ্রমিক মারাত্মক চোট পান। শুক্রবার তিনি মারা যান। ওই সংস্থায় শ্রমিকেরা বিপজ্জনক ভাবে কাজ করার সময়ে গার্ড রোপ, গার্ড রেল, নেট বা সেফটি বুটের মতো কোনও সামগ্রী পান না বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন। নির্মাণস্থলে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স থাকে না বলেও তাঁদের অভিযোগ। যদিও সংস্থার আধিকারিকদের দাবি, ‘‘কিছু শ্রমিক সংস্থার নাম খারাপ করার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা রটাচ্ছে।’’

এমনকি উপর থেকে পড়ে সালতাবের চোট পাওয়ার কথা মানতে চাননি নির্মাণ সংস্থার আধিকারিকেরা। সংস্থার তরফে উৎপল অধিকারী দাবি করেন, ‘‘পড়ে যাওয়ার কোনও ঘটনাই ঘটেনি। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। ওই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন।’’ মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের সালতাব শেখের মৃত্যু এবং তার পর নির্মাণ সংস্থার তরফে এই বক্তব্য নিয়ে শ্রমিকেরা ফুঁসছেন।

Advertisement

শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, বুধবার সালতাব ওপিডি ভবনের পাঁচ তলায় কাজ করছিলেন। আচমকা সেখান থেকে তিনি প্রায় ১০ ফুট নীচে ছাদের উপরে পড়ে যান। তাঁর কোনও চিকিৎসা করায়নি নির্মাণ সংস্থা। জখম অবস্থায় পর দিনও সালতাব কাজ করেন। রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পিক আপ ভ্যানে চাপিয়ে তাঁকে স্থানীয় জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসেন। শুক্রবার তিনি মারা যান। তবে ওই শ্রমিকের পরিবারের লোকজন কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।

কিন্তু এই মৃত্যুতে শ্রমিকদের একটা বড় প্রশ্ন তুলছেন, কেন শ্রমিক নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা থাকবে না? নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের কথায়, ‘‘এইমস কেন্দ্রীয় প্রকল্প। ওর মধ্যে আমরা ঢুকি না।’’ শ্রম দফতরের অন্যতম পরিদর্শক পলাশ সরকার জানিয়েছেন, মৃত শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা যোজনার আওতায় থাকলে তাঁর পরিবার ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবে। ওই সংস্থা শ্রম দফতরের নিবন্ধিত। যেহেতু ওই সংস্থার শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় মারা গিয়েছেন তাই ওই সংস্থা শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে বাধ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন