Widow Pension

স্বামী জীবিত, দিব্যি মিলছে বিধবা ভাতাও

রানাঘাট-২ ব্লকের বৈদ্যপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ৬৫ মানিক পাল। বর্তমানে তিনি জীবিত রয়েছেন। অথচ অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী মিলনরানি পাল নিয়মিত পেয়ে চলেছেন বিধবা ভাতা।

Advertisement

সুদেব দাস

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৩ ০৬:২৩
Share:

বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি তরজাও। প্রতীকী ছবি।

স্বামী, ছেলে, বৌমা, নাতি নিয়ে ভরা সংসার। অথচ, বিধবা ভাতা পাওয়ার জন্য জীবিত স্বামীকে মৃত বলে নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন মহিলা, এমনটাই অভিযোগ। শুধু নথি জমা দেওয়াই নয়, আবেদনকারী মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বিধবা ভাতা টাকাও। রানাঘাট-২ ব্লকের বৈদ্যপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এমন ঘটনা সামনে আসতেই প্রশাসনিক মহলে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি তরজাও।

Advertisement

রানাঘাট-২ ব্লকের বৈদ্যপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ৬৫ মানিক পাল। বর্তমানে তিনি জীবিত রয়েছেন। অথচ অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী মিলনরানি পাল নিয়মিত পেয়ে চলেছেন বিধবা ভাতা। স্থানীয়দের দাবি, ওই পরিবার রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সমর্থক। ওই পরিবারের আত্মীয়-পরিজনের অনেকেই সরাসরি রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গেও যুক্ত।

কিন্তু স্বামী জীবিত থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে মিলছে বিধবা ভাতার টাকা?

Advertisement

উপভোক্তা মিলনরানি পাল বলেন, ‘‘আমার ও স্বামীর দু’জনের বয়স ৬০ ঊর্ধ্ব। কিছু দিন আগে বার্ধক্য ভাতার জন্য বৈদ্যপুর-১ পঞ্চায়েত অফিসে নথিপত্র জমা দিই। কিন্তু বার্ধক্য ভাতার পরিবর্তে কী ভাবে তা বিধবা ভাতা হয়ে গেল, বলতে পারব না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমার স্বামী জীবিতই রয়েছেন। আগে আমি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর টাকা পেতাম। এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’

বৈদ্যপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের কৃষ্ণ রায় বিষয়টিকে বিজেপির চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দুয়ারে সরকার শিবিরে অনেকেই বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। সেখান থেকে হয়তো ভুলবশত তা বার্ধক্য ভাতার পরিবর্তে বিধবা ভাতা হয়েছে। এর পিছনে বিজেপির চক্রান্ত রয়েছে।’’

বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়ে বিধবা ভাতা পাওয়া কি কোনও ভাবে সম্ভব? জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে ‘স্বামীর মৃত্যু হয়েছে’ বলে শংসাপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক। পরবর্তীতে নথি খতিয়ে দেখার পর তবেই আবেদনপত্র গৃহীত হয়। বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করে, বিধবা ভাতা পাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। হতে পারে আবেদনকারী স্বামীর মৃত্যুর নকল শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন।’’

স্থানীয় বিজেপি নেতা অনুকূল সরকারের দাবি, ‘‘স্বামী বেঁচে থাকা সত্ত্বেও ‘মৃত’ প্রমাণ করে বিধবা ভাতার টাকা তুলেছেন ওই মহিলা। পঞ্চায়েত প্রধান অপরাধ ঢাকতে বিজেপির দিকে আঙুল তুলছেন।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন— ‘‘পঞ্চায়েত তৃণমূল দ্বারা পরিচালিত। তা হলে আমাদের চক্রান্ত হল কী করে? চুরি করা তৃণমূলের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।’’

এই বিষয়ে রানাঘাট-২ বিডিও খোকন বর্মন বলেন, ‘‘কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পরেই ওই উপভোক্তা মিলনরানি পালকে নোটিস করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তাঁকে অফিসে এসে সমস্ত ঘটনা জানাতে বলেছি। অন্যথা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, বিধবা ভাতার যে টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, তা-ও ফেরত নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন