সব কিছু দেখেও দেগে দিল ‘বিদেশি’

জীবনে কখনও বাংলাদেশ দেখিনি, অথচ ব্যবসা করতে অসমে  গিয়ে আমরাই চিহ্নিত হয়ে গেলাম বাংলাদেশি বলে। চোখ ফেটে জল এসে ছিল সে দিন। বড় অসহায় মনে হচ্ছিল নিজেকে।

Advertisement

গৌর সাহা

সুতি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

তেরো বছর ধরে হরেক মাল বিক্রি করি অসমের ঝালুকাবারি এলাকার আশপাশে। পাশেই ঝাল্লোতবারি সিটি এলাকায় লাল হোসেনের বাড়ি ভাড়া নিয়ে আমরা ৪০ জন মিলে এক সঙ্গে থাকতাম। এটাই আমাদের স্থায়ী ঠিকানা। চাটাইয়ের ঘর, ভাড়া মাসে দেড় হাজার টাকা। সকালেই রান্না করে খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে যাই। দিনভর বেচা কেনা সেরে ফিরে আসি সন্ধে নাগাদ। কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। এলাকার মানুষেরাও আমাদের ভাল করেই চিনতেন।

Advertisement

তবু গত বছর ডিসেম্বরে এক দিন হঠাৎই ঝালুকাবারি থানা থেকে পুলিশ এসে হাজির আমাদের ডেরায়। ঘণ্টাখানেক ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর থানায় যেতে বললেন। প্রত্যেকের দু’হাতের দশ আঙুলের ছাপ, দু’কপি করে ছবি ও আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সব জমা দিলাম থানায়। দিন পনেরো যেতেই আদালতের নোটিস সবার নামে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের ৫ নম্বর আদালতে ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। নোটিস ধরিয়ে বলা হল, আমরা নাকি অসমে অনুপ্রবেশকারী, বাংলাদেশি। তাই বিদেশি। ১৫ দিন পর গুয়াহাটির ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কোর্টে হাজির হতে হল। কোর্টে গিয়ে জানতে পারলাম কোনওরকম নথিপত্র ছাড়াই আমরা বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে নাকি অসমে অনুপ্রবেশ করেছি। তাই সকলেই বিদেশি নাগরিক। শুধু তাই নয়, আমাদেরই আদালতে নথি দাখিল করে প্রমাণ করতে হবে আমরা ভারতীয়।

জীবনে কখনও বাংলাদেশ দেখিনি, অথচ ব্যবসা করতে অসমে গিয়ে আমরাই চিহ্নিত হয়ে গেলাম বাংলাদেশি বলে। চোখ ফেটে জল এসে ছিল সে দিন। বড় অসহায় মনে হচ্ছিল নিজেকে। আইনজীবীর পরামর্শে বিভিন্ন নথির জন্য ছুটে আসি সুতির চক সৈয়দপুরের বাড়িতে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, এসডিও’র শংসাপত্র জমা দিলেও সে দিন শুনতে হয়েছিল বাজারে নাকি পয়সা দিলেই তা মেলে। সন্দেহ মুছল না। তাই ১৯৫৪ সালের জমির দলিল লাগবে। কিন্তু ৩৪ বছর বয়স আমার। ৬০ বছর আগের দলিল কোথায় পাব।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত প্রায় এক বছর ধরে চলা মামলার নিষ্কৃতি হল এ বছরের গোড়ায়। তবে, আর ভরসা পাই না। ফের যদি দেগে দেয়, ‘অনুপ্রবেশকারী!’ পেটের টানে ফের গিয়েছিলাম ও দেশে। কিন্তু আর সাহস পাচ্ছি না। আসলে, জঙ্গিপুরে আমাদের গ্রামে কোনও কাজ নেই। অসমে হরেক মাল বিক্রি করে দুটো বাড়তি পয়সা হাতে পাচ্ছিলাম। বাড়িতে স্ত্রী, বাবা,মা ছেলে মেয়েরা রয়েছে। সংসারটা চলে যায়। কিন্তু এ বাবে বিদেসি তকমা নিয়ে তো দিনযাপন চলে না। ব্যবসা গুটিয়ে এখন রুজির উপায় খুঁজছি।

(অসমে গিয়ে ভুক্তভোগী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন