জালিয়াতি এটিএমে, ধৃত বাবা-মা-ছেলে

বাবা, মা আর কিশোর ছেলের ‘গ্যাং’!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

তাহেরপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:৩১
Share:

বাবা, মা আর কিশোর ছেলের ‘গ্যাং’!

Advertisement

একের পর এক লোককে বেকুব বানিয়ে এই জালিয়াত ত্রয়ী তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নিত টাকা। পুলিশও জানিয়েছে, জোচ্চুরির এমন পারিবারিক চক্র বিরল। তাদের লোকঠকানোর পন্থাও ছিল অভিনব। বেশ কিছু দিন তক্কে-তক্কে থেকে মঙ্গলবার রাতে বীরনগর থেকে কল্যাণীর গয়েশপুরের বাসিন্দা গৌতম মজুমদার ও রত্না মজুমদার নামে ওই দম্পতি এবং তাদের কিশোর ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ছেলেটি দশম শ্রেণির ছাত্র। ধৃতদের কাছ থেকে একাধিক গ্রাহকের এটিএম কার্ড উদ্ধার হয়েছে। বুধবার ওই দম্পতিকে রানাঘাট আদালতে ও তাঁদের ছেলেকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে হাজির করা হয়। দম্পতিকে তিন দিন পুলিশ- হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিশোরকে কৃষ্ণনগর হোমে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, বছর ষোলোর কিশোরটি এটিএম কাউন্টারের পাশে ওত পেতে দাঁড়িয়ে থাকত। যে বা যাঁরা নিজেদের এটিএম কার্ড ব্যবহার করতে পারতেন না তাঁদের সে নিজের থেকে এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করত। তাদের কার্ড নিয়ে এটিএম মেশিন থেকে টাকা তুলে দিত। প্রাথমিকভাবে সকলেই টাকা তোলার পরে তাকে ধন্যবাদ জানাতেন। ভুল ভাঙত কিছু দিন পরেই। যখন টের পেতেন, অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে টাকা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশ জানিয়েছে, সাহায্য করার নামে এটিএম কার্ড বদলে গ্রাহকের হাতে একইরকম অন্য কার্ড ধরিয়ে দিত কিশোরটি। বেশির ভাগ লোকই অত খুঁটিয়ে কার্ড পরীক্ষা করতেন না। ওই কিশোরের বাবা-মাও অপারেশনের সময় এটিএম কাউন্টারের আশপাশেই থাকত, যাতে কিশোরটি বিপদে পড়লে সাহায্য করতে পারে। তারা বাইরে পাহারা দিত। আর ভেতরে অপারেশন চালাত ছেলে।

সম্প্রতি এদের হাতে প্রতারিত হয়েছিলেন তাহেরপুর থানার বীরনগর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের খর্দাপাড়ার বাসিন্দা অতুল সাহা। অতুলবাবু পেশায় বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ ধরার কাজ করেন। এটিএম কার্ড ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেন না। গত ১১ ফেব্রুয়ারি টাকার দরকার হওয়ায় বীরনগর বাজারের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে যান তিনি। কাউন্টারের সামনে এক বছর ষোলোর ছেলেকে দেখতে পেয়ে তাঁর কাছেই সাহায্য চান। তাঁর সাহায্যে ২০ হাজার টাকাও তোলেন। পরে ছেলেটি এটিএম কার্ড ফেরতও দেয়।

এর মাস খানেক পরে ফের টাকার প্রয়োজন হয় তাঁর। এ বার আর এটিএম কাউন্টারে না গিয়ে সোজা ব্যাঙ্কে যান। কিন্তু সেখানে টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন যে, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় উধাও হয়ে গিয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা! তাহেরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অতুলবাবুর অভিযোগ, “বাচ্চা ছেলেটি আমার এটিএম কার্ডের বদলে অন্য কার্ড দেয়। আমি তখন বুঝতে পারিনি।” তাঁর অ্যাকাউন্টে এখন পড়ে আছে গোটা চল্লিশ টাকা।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এই বাবা-মা-ছেলের গ্যাংয়ের কথা জানতে পারে। এরা তেমন লোককেই নিশানা করত যারা তেমন চটপটে নন, তেমন লেখাপড়া জানেন না এবং এটিএমের ব্যাপারে সড়গড় নন। বীরনগরের কিছু এটিএম কাউন্টারের সামনে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। তার পরই তিন জন পুলিশের পাতা জালে ধরা পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন