ফাইল চিত্র।
নয়ানজুলিতে মুখ গেঁথে মিনিডর ট্রাকটা। পিচ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে খান কয়েক ঘরমুখী পিকনিক ফেরত যুবকের রক্ত-ভাসা দেহ আর সেই সদ্য দুর্ঘটনার রেশ ধরে রাখছে অতিকায় ডিজে বক্সের থরথর গান — ‘ঝুম্মা চুম্মা দে দে...!’
নদিয়া নাকাশিপাড়ায় বেথুয়াডহরি হরিণ বাগানে পিকনিক সেরে ঘরে ফেরা সেই দুর্ঘটনাটা এখনও মনে আছে তামাম কৃষ্ণনগরের। মনে আছে, ন’জনের মৃত্যের পরেও ডিজে’র সেই মূর্ছনা! আশপাশের লোকেরা বলেছিলেন, ডিজে বক্সের সুইচটাই অফ করা যাচ্ছিল না সে বিকেলে। আর সে গাড়ির চালক পরে পুলিশকে বলেছিলেন, ‘কী করব এমন ডিজে বাজছিল তাল ঠিক রাখতে পারিনি!’
বছর ঘুরে শীত ফিরে এসেছে সেই উদ্দাম ডিজের দাপট নিয়েই। পিকনিক, বিয়ে, উল্লাস এবং ডিজে! তবে, নদিয়া জেলা পুলিশের তেমন কানে তালা লাগেনি। ডিজে উদ্দামতায় রাশ টানা জরুরি মনে করছেন না তাঁরা।
তবে, প্রয়োজনটা বুঝেছে পড়শি মুর্শিদাবাদের পুলিশ। হাজারদুয়ারির আশপাশে গত কয়েক বছরে যে বুক ধড়ফড় করা ডিজে-র দাপট ছিল সেটা এ বার হারিয়ে গেছে। সে তাণ্ডবে তালা দিয়ে পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে রাস্তা ঘাটে চলন্ত গাড়িতে ডিজে নয়।
গত কয়েক দিনে প্রচার করে সে ব্যবস্থায় দাঁড়ি টেনে দিয়েছে পুলিশ। লালবাগ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বরুণ বৈদ্য বলছেন, ‘‘নজরদারি চালাচ্ছি। পিকনিক বা কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ডিজে বাজানো চলবে না। সে নির্দেশে কান না দেওয়ায় গ্রেফতারও করা হয়েছে বেশ কয়েক জনকে।’’
জেলা পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানীয় পুরসভা, ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরাও রাস্তায় নেমে পিকনিকের জায়গায় নজরদারি চালাচ্ছেন। মঙ্গলবার কালনা, নদিয়া এবং দুর্গাপুর থেকে আসা তিনটি পিকনিক পার্টিকে রাস্তায় ডিজে বাজানোর জন্য সটান ফিরিয়েও দেওয়া হয়েছে।
ডিজে নিয়ে ফরমান জারি করেছে মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক ব্লক ডোমকলও। সেখানকার স্থানীয় মাইক ভাড়া দেওয়া ব্যববসায়ীরাও লিফলেট ছড়িয়ে, ভ্যান রিকশায় অলি-গলি, গ্রামের মাঠে ময়দানে প্রচার চালিয়েছে—ডিজে বক্স বাজানো চলবে না। পিকনিক হবে যেখানে, ডিজে বক্স সেখানেই পৌঁছে দেবেন তাঁরা। ফিরিয়েও আনবেন। ওইটুকুই, রাস্তায় ডিজের তাণ্ডব— কিছুতেই নয়। পুলিশও তাদের পাশে থেকে পথে ঘাটে ডিজের দাপট দেখলে ঘাড় ধরে নিয়ে গিয়েছে থানায়। তবে, সেই আঁচ নদিয়ায় পৌঁছল না কেন? জেলা পুলিশের কর্তারা কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। শুধু আমতা আমতা করে জানিয়েছেন, ‘‘একটু কড়া হওয়া উচিত ছিল ঠিকই!’’