যাতায়াত এভাবেই। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
বুধবার আঁধার থাকতেই ঘুম থেকে উঠেছিলেন আব্দুর রশিদ। কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ পরিজন, পৌঁছেই রক্ত দেওয়ার কথা। জলঙ্গির সাহেবরামপুর মোড়ে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বেলা যখন গনগনে হয়ে উঠল, জানতে পারলেন বাস বন্ধ।
গভীর উদ্বেগ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কীই বা করতে পারতেন তিনি। আব্দুর নিতান্তই এক উদাহরন। সাত দিনে পৌঁছনো নদিয়ার বাস বন্ধের ছায়ায় এখন মেঘ করেছে মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও।
আর তার ফায়দা লুঠতে, ট্রেকারের বাড়া এক লাফে বেড়েছে তিন গুণ, বেকায়াদায় পড়া মানুষগুলো গাড়ি ভাড়ার চেষ্টা করেও দেখেছেন, তিনশো টাকার ভাড়া আটশো হাঁকছে। প্রায় যোগাযোগহীন অবস্থায় ছটফট করছে ডোমকল, জলঙ্গি, রানিনগর এলাকা। দু’পা হাঁটলেই পড়শি জেলা নদিয়া। তবে, সে জেলার করিমপুর-তেহট্টও তেমনই বিচ্ছিন্ন। রেলের পাত পড়েনি ওই সব এলাকায়। জেলা সদর থেকে আশি কিলোমিটার দূরের সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুর এখন তাই প্রত্যন্ত এক এলাকা। নিত্য যাতায়াত করা ব্যবসায়ী, অফিসর যাত্রী স্কুল পড়ুয়া— হা পিত্যেশ করে বসে আছেন, কবে চালু হবে বাস। ডোমকল-কোলকাতা রুটে বেসরকারি বাস চলে বাবুয়া মুখোপাধ্যায়ের। বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মানুষের হয়রানি দেখে বন্ধের মধ্যেও ঝুঁকি নিয় এক দিন বাস চালিয়ে পাল্টা যা হুমকি শুনলাম, গ্যারাজে ঢুকিয়ে দিয়েছি বাস।’’
করিমপুরের চেহারাটাও অবিকল এক। ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। উপায়হীন অনেকেই তাই বাধ্য হয়ে ছোট গাড়ী বা ট্রাকে চেপে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন বটে, কিন্তু তার খেসারত গুনতে হচ্ছে দেদার। করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী নেপাল শর্মা। জানালেন, “খুব জরুরি কাজ, কৃষ্ণনগর না গেলে নয়। ৫০ টাকা বাস ভাড়ার বদলে দেড়শো টাকায় লরির মাথায় যেতে হল।’’ কৃষ্ণনগর স্কুলে এক শিক্ষিকা হোগলবেড়িয়ার সাবিত্রী বিশ্বাসের অভিজ্ঞতা এ রকম— “সপ্তাহের ছ’টা দিন করিমপুর থেকে বাসে কৃষ্ণনগর স্কুলে যাতায়াত করি। এখন সব বন্ধ। সে দিনও তো দেড়শো টাকায় লছিমন ভাড়া করে ফিরেছি!’’ তাই বন্ধ বাসের আবহে, আপাতত এ ভাবেই দুই জেলার দিনযাপন।