এগারোটাতেও খুলল না ব্যাঙ্ক, ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা

ঘড়িতে তখন ন’টা পঁয়তাল্লিশ। গুটিগুটি পায়ে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন অনেকই। অপেক্ষা করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক পঙ্কজ দত্ত।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৬
Share:

ব্যাঙ্কের দরজা খোলার অপেক্ষায় গ্রাহকেরা। — নিজস্ব চিত্র

ঘড়িতে তখন ন’টা পঁয়তাল্লিশ। গুটিগুটি পায়ে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন অনেকই। অপেক্ষা করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক পঙ্কজ দত্ত। দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী তরুণ দে, অপূর্ব ঘোষেরাও।

Advertisement

কিন্তু ঘড়ির কাঁটা দশটা পেরিয়ে গেলেও স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নবদ্বীপ সিটি শাখার দরজা খুলল না। তত ক্ষণে ভিড় বেড়েছে আরও খানিকটা। ব্যাঙ্ক খোলার অপেক্ষায় গ্রাহকদের সঙ্গে ব্যাঙ্কের সামনের জটলাটায় দাঁড়িয়ে জনা কয়েক কর্মীও। কিন্তু ম্যানেজারের দেখা নেই। ব্যাঙ্কের চাবি তাঁর কাছেই থাকে। শুরু হয়ে যায় গুঞ্জন— ‘‘আজও কি সেই...?’’

গ্রাহকদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু পরে খোলে নবদ্বীপ চারিচারাপাড়ায় স্টেট ব্যাঙ্কের শাখাটি। বিশেষ করে সপ্তাহের প্রথম দিন বা ছুটির পরের দিন ব্যাঙ্ক দেরিতে খুলবে, এটাই যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে উঠেছে। এ দিন অবশ্য ছিল বুধবার। গ্রাহকদের উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। তত ক্ষণে ঘড়ির কাঁটা সাড়ে দশ পেরিয়ে গেছে। নানারকম মন্তব্যের মুখে পড়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ দেখায় অপেক্ষমান ব্যাঙ্ককর্মীদেরও। খবর পেয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের নবদ্বীপ মূল শাখা থেকে ছুটে আসেন একাধিক আধিকারিক। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা এসে গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁরা গ্রাহকদের অনুরোধ করেন মূল শাখায় যেতে। কিন্তু গ্রাহকরা রাজি হননি। শুরু হয় বিভিন্ন জায়গায় ফোন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। তখনও ম্যানেজার উৎপল তপস্বীর দেখা নেই। শেষ অবধি তিনি যখন এসে পৌঁছন, তত ক্ষণে এগারোটা বেজে গিয়েছে।

Advertisement

কেন এই বিলম্ব? উত্তরে ওই ম্যানেজার জানান, শারীরিক অসুস্থতার জন্য এ দিন তাঁর আসতে দেরি হয়েছে। শুনে ওই ব্যাঙ্কের এক গ্রাহক বলেন, “অসুস্থ তিনি হতেই পারেন। কিন্তু সে জন্য কেন আমরা গ্রাহকেরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হব? আর এ তো এক দিনের ঘটনা নয়, নতুন ম্যানেজার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে আজ যা হল, তা নজিরবিহীন।”

একই কথা বলেন এলাকার ব্যবসায়ী অপূর্ব ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, “মাস কয়েক হল এই নতুন ম্যানেজার এসেছেন। তিনি আদতে কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা। থাকেন কৃষ্ণনগরে। ছুটির পরের দিন কলকাতা থেকে সরাসরি আসেন। তাই দেরিতে ব্যাঙ্ক খোলা হয়। কারণ চাবি ওঁর কাছেই থাকে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা সরাসরি ম্যানেজারবাবুকে বলেছিলাম। কিন্তু কোনও ফল যে হয়নি, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন।” স্বর্ণব্যবসায়ী তরুণ দে রীতিমতো হিসেব করে বলেন, “ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে আজ নিয়ে প্রায় দশ দিন এই জিনিস ঘটল। ভিড়ের চাপ এড়াতে শহরে নতুন শাখা খুলে তা হলে কী লাভ হল?”

শ্রীবাসঅঙ্গন রোডে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রধান শাখায় ভিড়ের চাপ কমাতে কয়েক বছর আগে নবদ্বীপ শহরে একাধিক শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেই মতো ২০১৩-য় নবদ্বীপ চারিচারাপাড়া ও বাবলারিতে আরও দু’টি শাখা খোলা হয়।

ম্যানেজার উৎপল তপস্বী অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত দেরি করে আসার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর কথায়, “আজ নিয়ে দু’দিন কিছুটা দেরি হয়েছে। আগে এক দিন ট্রেন ফেল করেছিলাম। আর গত কাল রাতে জ্বর আসায় শরীরটা খুব খারাপ ছিল। ফলে এ দিন সকালে কৃষ্ণনগর থেকে আসতে এত দেরি হয়ে গিয়েছে। এ বাদ দিয়ে রোজই ব্যাঙ্ক নিয়ম মেনে খোলা হয়।”

অসুস্থতার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কেন জানাননি? উত্তরে তিনি বলেন, “এই ব্রাঞ্চে তিনি একাই আফিসার। দু’জন কর্মী আছেন। নিয়ম মতো চাবি তাঁর কাছে থাকে। ফলে তিনি এলে ব্যাঙ্ক খোলা হয়। আরও এক জন অফিসার দেওয়ার জন্য বলেছি।” যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। রিজিওনাল ম্যানেজার তপন ভট্টাচার্যের মোবাইল দুপুরের পর থেকেই বন্ধ ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement