পৌষ-কুয়াশার দিন গুনছে সীমান্তের পাচারকারী

মালদহ-মুর্শিদাবাদ এমনকী নদিয়ার শিকারপুর এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনির শরীরী ভাষায় সে কথাই বলছে। বৃহস্পতিবার, পদ্মার বাঁক ধরে জলপাই পোশাকে তাদের নিরন্তর চলাচল মনে করিয়ে দিচ্ছে আরও একটা কথা— শীত আসছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:১০
Share:

চরের নল ঘাস নুইয়ে উত্তুরে হাওয়া নিরন্তর বইছে। সেই দামাল হাওয়ায় চর আলাতুলির আনাচ কানাচ থেকে বারুদের গন্ধ উড়ে গিয়েছে হয়ত, কিন্তু তার আঁচ উড়ে এসেছে এ পাড়েও। মালদহ-মুর্শিদাবাদ এমনকী নদিয়ার শিকারপুর এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনির শরীরী ভাষায় সে কথাই বলছে। বৃহস্পতিবার, পদ্মার বাঁক ধরে জলপাই পোশাকে তাদের নিরন্তর চলাচল মনে করিয়ে দিচ্ছে আরও একটা কথা— শীত আসছে।

Advertisement

সীমান্তের গাঁ-গঞ্জ বলে, শীত মানেই ওদের পৌষ মাস। কাদের?

চর মেঘনার নিমাই সর্দার কিংবা লালগোলার নাড়িখাকি চরের আখতার আলি বলছেন, ‘‘শীতের কুয়াশা ওদের গায়ে পোশাকের মতো এঁটে থাকে, পাচার তখন আরও অবাধ হয়ে যায়!’’ গত বছর নোট-কাণ্ড আর ও পাড়ে গুলশান কাণ্ডের জেরে সীমান্তরক্ষীদের ভারী বুট হেঁটে ফিরে ছিল কুয়াশা ভেদ করে। কুয়াশা সে বার তেমন কাজে লাগাতে পারেনি পাচারকারীরা। এ বার প্রথম অঘ্রানেই চর আলাতুলির বিস্ফোরণ যেন বিএসএফকে ফের সতর্ক করে দিয়েছে। তা হলে এ বারও মন্দী!

Advertisement

সীমান্তের গ্রামবাসীরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এ বার ‘তেনারাও’ কিন্তু তক্কে তক্কে থাকবেন। বার বার পাচারে বাধা পেলে তো বাজারই নষ্ট হয়ে য়াবে। এ বার তাই প্রথম শীতেই পাচার আর প্রহরার মধ্যে আগাম বারুদের গন্ধ পাচ্ছেন সীমান্তের মানুষজন।

কুয়াশার আড়ালে গরু পাচারের রমরমা নতুন ঘটনা নয়। সীমান্তের দশ-বারো কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন গ্রামে ইতিমধ্যে ‘গরু জমানো’ বা গ্রামের গোয়ালে গরু এনে জড় করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় পুলিশের খবর। এ ছাড়া নদিয়ার বেশ কিছু গ্রাম থেকেও এসেছে সে খবর।

আর হপ্তা কানেকের মধ্যে কুয়াশা নিবিড় হয়ে ছড়িয়ে পড়লেই সে কাজে আর বাধা থাকবে না! তবে, মঙ্গলবারের ঘটনার জেরে গরু এখন গৌণ। দিল্লির নির্দেশে গরুর চেয়েও ঢের দামি জঙ্গি আনাগোনা রুখতে এ বারও আঁটোসাঁটো হচ্ছে সীমান্ত। বিএসএফ সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে দিল্লি থেকে ইতিমধ্যেই চিঠি এসে পৌঁছেছে বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর কলকাতায়।

সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি হওয়ার পরে এলাকায় যানবাহনের চলাচলেও রাশ টানছে বিএসএফ। এমনকী লাল বাতি লাগানো ভিআইপি তকমা মারা গাড়িতেও চলছে চিরুনি তল্লাশি। কারণ আপ কিছুই নয়, গত কয়েক বছরে ওই লাল বাতির আড়ালেই পাচার এখন সহজ উপায়। মুর্শিদাবাগৃদের ভগবানগোলা এবং রানিনগর সীমান্তে সে গাড়িতে গরু পাচারের ঘটনারও নজির রয়েছে।

সীমান্তে গরুর হাটের উপরেও ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়ার আট কিলোমিটারের মধ্যে গরুর হাটের উপরে ফতোয়া জারি হয়েছে। এ বার তাই, সে সব হাটে তেমন ভিড়। বরং সীমান্ত ঘেঁষা গোয়াল ভরে উঠছে গরুতে। ক’দিন পরে, কুয়াশা জাঁকিয়ে পড়লেই আবছায়ায় হারিয়ে যাবে তারা। সীমান্তের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বড় পশুর হাট প্রশাসনের নজরে থাকছে। এখন তাই গ্রামের আনাজের হাটেও পাশেই গরু বেচা কেনার সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছেন পাচারকারীরা।

অপেক্ষা শুধু ঘন কুয়াশার। পৌষের মুখেই সে ছড়িয়ে পড়বে সীমান্তে। তার আড়ালে শুধু গরু নয়, ‘তেনাদের’ আনাগোনাও কি অনায়াস হয়ে পড়বে? মুরুটিয়া সীমান্তে বিএসএফের ব্যাটেলিয়ান কমানডান্ট হাসছেন, ‘‘দেখুন না, আমরা কুয়াশা ভেদ করতে পারি কিনা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন