প্রতীকী ছবি।
দরজায় নির্বাচন কড়া নাড়তেই কারও হাঁটুতে তীব্র বাত, কারও বা অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, যে কোনও সময়ে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হবে। শিক্ষকদের কেউ বা ডিউটি এড়াতে সটান নির্দল প্রার্থী হয়েছেন।
স্কুল শিক্ষক থেকে সরকারি কর্মী — ভোটের ডিউটি থেকে নিস্তার পেতে দরখাস্তের পাহাড় জমছে জেলাশাসকের দফতরে। প্রয়োজনে নেতা-মন্ত্রী থেকে ইউনিয়নের মাথা, ধরতে কসুর করছে না অনেকেই। কড়া ধমকের ধাক্কায় ফিরে এসে নতুন ‘ফিকির’ও খুঁজছেন অনেকে, এমনই জানা যাচ্ছে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, দুই জেলাশাসকের দফতরে কান পাতলে।
গত লোকসভা নির্বাচনে শান্তিপুরের এক শিক্ষক তো মিথ্যেকে সত্যি প্রমাণ করিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডে পাশ করার জন্য বাজার থেকে জোলাপ কিনে খেয়ে সত্যি পেটের গোলমাল পাকিয়েছিলেন। এ বার? মুখ ব্যাজার করে তিনি জানাচ্ছেন, এ বারও চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। তবে ডিউটিটা এ বার আর ফেরাতে পারছেন এমন ভরসা নেই! বহরমপুরের এক ব্যাঙ্ক কর্মী আগাম দিয়ে বসেছেন —স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। এই সময়ে বাইরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফল মিলেছে? বলছেন ‘‘মনে হচ্ছে ছাড় পেয়ে যাব!’’
সরকারি কর্মচারীদের নানা বাধা। তারা ভোটে দাঁড়াতে পারেন না। কিন্তু শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ভোটে দাঁড়ানোয় কোনও বাধা নেই। সেই সুবিধাকে ঢাল করে অনেক শিক্ষকই ডিউটি এড়াতে নিজেই নির্দল প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন। কারও প্রতীক ফুটবল তো কারও দোয়াত-কলম। কেউ বা আবার বই, পাখা কিংবা শিশুর মুখ।
পঞ্চায়েত ভোটে একটি ভোটও গুরুত্বপূর্ণ, জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে। দেপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শিমুলতলার পরিতোষ সরকার নাকাশিপাড়ার এক স্কুলের শিক্ষক। চাকরির বয়স নয় বছর। ভোটের ডিউটি এড়াতে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দে পাড়ারই অন্য এক বুথে বট গাছ চিহ্নে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন নির্দল প্রার্থী হয়ে। ভোট পেয়েছিলেন? বলছেন, ‘‘সে এক কাণ্ড, কারা বদমাইশি করে তিন ভোট দিয়েছিলেন। আর কটা বেশি হলেই কেলেঙ্কারি, রাজনৈতিক দলগুলোর রোষের কারণ হয়ে যেতাম!’’ এ বার নমিনেশন তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত ভোটে দাঁড়াননি পরিতোষ। তাঁর দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে তাকে অনুরোধ করা হয়েছে না দাঁড়াতে — ‘‘এ বছর তাই আর ঝুঁকি নিলাম না, কথা না শুনলে যদি পেটায়!’’