তৈবিচারার আঁধার ফুঁড়ে চোখে তাঁর রিও’র আলো

ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোর প্রতি ঝোঁক ছিল দুই বোনের। প্রতি দিন সকাল-বিকেলে নিয়ম করে গ্রামের কাঁচা রাস্তায় দৌড়তো বড় জন। আর দিদির পিছন পিছন ছুটতো ছোট্ট মেয়েটা।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বেথুয়াডহরি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৫
Share:

ফোনের ও পারে দেবশ্রীর সঙ্গে কথায় ব্যস্ত মা-দিদি। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোর প্রতি ঝোঁক ছিল দুই বোনের। প্রতি দিন সকাল-বিকেলে নিয়ম করে গ্রামের কাঁচা রাস্তায় দৌড়তো বড় জন। আর দিদির পিছন পিছন ছুটতো ছোট্ট মেয়েটা। দিদিকে হারিয়ে দেওয়ার সে কী আপ্রাণ চেষ্টা!

Advertisement

সেই দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতেন তাদের বাবা। ছোট মেয়েটাকে উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘‘তুই ঠিক পারবি। চালিয়ে যা।’’

আট বছর হয়ে গেল মন্মথরঞ্জন মজুমদার আর নেই। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু সত্যি হয়েছে। শুধু দিদিকে নয়, আরও অনেককে পিছনে ফেলে রিও অলিম্পিকের টিকিট ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁর ছোট মেয়ে। বছর পঁচিশের দেবশ্রী মজুমদার। ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে অংশ নেবেন তিনি।

Advertisement

শুক্রবার সকালে বেঙ্গালুরুর জাতীয় শিবির থেকে ফোন করে সে কথা জানালেন গ্রামের বাড়িতে। বেথুয়াডহরি থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে তৈবিচারা গ্রামে তখন উৎসবের মেজাজ।

মেয়ের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোনায় জল চলে আসে মা মেনকাদেবীর। বললেন, ‘‘আমরা সবাই খুশি। কিন্তু বেঁচে থাকলে সব থেকে বেশি আনন্দ পেতেন ওঁর বাবা।’’ ৮ বছর হল মন্মথরঞ্জন মারা গিয়েছেন। মেনকাদেবী জানালেন, মেয়ে যখন খেলার ভাল সুযোগ পেল, তখন তাঁর বাবার আর দেখা হল না।

দেবশ্রী মজুমদার

মন্মথরঞ্জন গভীর নলকূপের অপারেটেরের কাজ করতেন। টিনের ছাউনি এবং বাঁশের বেড়া দেওয়া ঘরে তাঁর সামান্য বেতনে চার মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনও মতে সংসার চলতো। তৈবিচারা গ্রামে দেবশ্রীদের পাড়ার প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা ছিল। পরে অবশ্য প্রশাসনের উদ্যোগে রাস্তা পাকা হয়। বিদ্যুতের খুঁটি এসেছে সম্প্রতি। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও আসেনি।

যাঁকে ঘিরে এত হইচই, সেই গ্রামের মেয়ে কী বলছে?

দেবশ্রীর কথায়, “২০০৬ সালে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতা চলাকালীন সাই-এর স্যার তপনকুমার ভান্ডারি আমার খেলা দেখেন। তারই পরামর্শ বাবা আমাকে সেই সময় সাইতে ভর্তি করেন। ২০০৬ সালে জুনিয়র ন্যাশনাল চাম্পিয়নশিপে তৃতীয় হই। ২০০৭ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে (যুব) পঞ্চম। গত বছর এশিয়াডে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় হই। এ বার এল অলিম্পিকের টিকিট।’’

এ রকম পাড়াগ্রাম থেকে উঠে এসে অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার কথা ভেবেছেন কখনও?

জবাবে আত্মবিশ্বাসী দেবশ্রী বলেন, ‘‘ভাল জায়গা করবো বলেই তো গ্রাম ছেড়েছিলাম।’’ খানিক ক্ষণ চুপ করে থেকে দেবশ্রী ফের বলতে তাঁর বাবার কথা। —“বাবা স্বপ্ন দেখতেন, আমি এক দিন অলিম্পিকে যাব। আজ বাবাকে খুব মিস করছি।”

২৫ জুলাইয়ের পর ব্রাজিলের রিও-র উদ্দেশে রওনা দেবেন তরুণী। সে দিকে তাকিয়েই এখন দেবশ্রী ছুটছেন, ছুটেই চলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন