যানজট এড়াতে গ্রাম পথে দশ চাকা

ফরাক্কার পথ গিয়েছে কিঞ্চিৎ বেঁকে। সংস্কারের গেরোয় সে পথে দীর্ঘ যানজট। যান চলাচলে বেজায় হ্যাপা। তাই সেতুতে ওঠার আগে জাতীয় সড়ক ছেড়ে কিছু গ্রামীণ সড়ককেই বেছে নিচ্ছে পণ্য বোঝাই দশ কখনও বা ষোলো চাকার লরি। 

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৮
Share:

গ্রামের পথেই চলেছে বালি বোঝাই লরি

ফরাক্কার পথ গিয়েছে কিঞ্চিৎ বেঁকে। সংস্কারের গেরোয় সে পথে দীর্ঘ যানজট। যান চলাচলে বেজায় হ্যাপা। তাই সেতুতে ওঠার আগে জাতীয় সড়ক ছেড়ে কিছু গ্রামীণ সড়ককেই বেছে নিচ্ছে পণ্য বোঝাই দশ কখনও বা ষোলো চাকার লরি।

Advertisement

জাতীয় সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার বিড়ম্বনা এড়াতে, গ্রামীণ রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে তারা সেতুর মুখে ফের ভেসে উঠছে মূল সড়কে।

আর এই ‘ফাঁকি’র বহর সামলাচ্ছে সেতু লাগোয়া অন্তত খান পনেরো গ্রামের বাসিন্দারা। ধুলোয় ধুসরিত ঘর-বাড়ি, অহরহ দুর্ঘটনার ভ্রুকুটি ধুলোয় জেরবার হয়ে শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বেড়ে ওঠা— অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠায় গ্রামের বাসিন্দারাও বহু জায়গায় নিজেরাই লাঠিসোঁটা হাতে পথে নেমেছেন। আটকে দেওয়া হচ্ছে ভারী যান।

Advertisement

উল্টো চিত্রও যে নেই এমন নয়। প্রায় নিঝুম সেই সব গ্রাম পথে লরি, ট্রেকার, গাড়ির মিছিল নামায়, সে পথে কোথাও বা গজিয়ে উঠেছে চা-পান-অস্থায়ী মিষ্টির দোকান। পথচলতি গাড়ি থেকে সে সব দোকানে কেনাকাটাও বেশ।

জাতীয় সড়ক ছেড়ে জিগরির কাছে গ্রামীণ এলাকার সড়ক পথে নেমে পড়ছে বালি ও পাথর বোঝাই ভারী যান। ফরাক্কার অর্জুনপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ওয়াহিদা খাতুনের অভিযোগ, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজট। সেই সব যান টপকে ফরাক্কা সেতু পেরনো যাবে না দেখে জিগরির মোড় দিয়ে অর্জুনপুরে ঢুকে পড়ছে বালি-পাথর বোঝাই ভারী যান।

তার পরে, তোফাপুর, শিবনগর, অর্জুনপুর, কুলিগ্রাম, জামতলা, দুর্গাপর-সহ অন্তত ১৫টি গ্রাম পেরিয়ে বেনিয়াগ্রামের কাছে তা ৩৪ নম্বর ফের জাতীয় সড়কে উঠছে ঠিক ফরাক্কা সেতুর মুখে। ওয়াহিদা বলেন, ‘‘এর ফলে গ্রামীণ সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। অথচ সরকার গত মাস থেকেই গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’’

এ ব্যাপারে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ফরাক্কা থানার পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছেয়। এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য মহসীনা খাতুন বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এই যান রুখতে গেলে অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে। তাই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে গ্রামীণ রাস্তায় ঢোকার আগে প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক নিয়োগ করা হলে সমস্যাটা এড়ানো যায়।’’

যানজট এড়াতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ছেড়ে শঙ্করপুর ও জিগরি দিয়ে গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু শঙ্করপুর সেতু পেরিয়ে ফরাক্কা সেতুতে আসতে গেলে কেদারনাথ সেতু পেরোতে হবে, এবং সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রহরা রয়েছে। তাই ভারী যান যেতে বাধা পাচ্ছে। কিন্তু উন্মুক্ত জিগরির পথে সে বাধা নেই।

এলাকার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বলেন, “দু’দিন আগে রাতে আমি পাড়ার কয়েক জনকে নিয়ে বালি বোঝাই ১০টি লরি আটকাই। শেষ পর্যন্ত তারা আর এ পথে আসব না বলে ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দেওয়া হয়।’’

ঝাড়খণ্ডের রিশোড় গ্রামের লরি চালক সেলিম শেখ বলছেন, “গাড়িতে দুই সিভিকের হাতে ২০০ টাকা দিয়ে অর্জুনপুরে ঢুকেছি। ফরাক্কা সেতু পেরোব সন্ধ্যের পরে, সেখানেও ফের ২০০ টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া

উপায় কী!’’

দু’সপ্তাহ আগে এই ধরনের অভিযোগ পেয়ে ফরাক্কা থানার আইসি উদয় শঙ্কর ঘোষ নিজেই ফরাক্কা সেতুর সামনে বালি বোঝাই একাধিক লরি আটকে সেতুর মুখ থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু আবার যে কে সেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন